এক ব্যক্তিই পুলিশ-উপসচিব-সাংবাদিক!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নিজেকে কখনো বিসিএস অফিসার, পুলিশ-উপসচিব-নৌবাহিনীর কর্মকর্তা আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিতেন।  আর এসব পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিতেন অর্থ।  পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর ও সিলযুক্ত ভূয়া সুপারিশপত্র সরবরাহ করে ওই ব্যক্তি।  এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরগত রাতে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানার কামালগেট এলাকা থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।  গ্রেফতার মোজাম্মেল হক (৪৩) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা গ্রামের হাজী আব্দুল হকের ছেলে।  বাসা নগরীর আলকরণ এলাকায়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন জানান, করোনায় সদ্য স্বামীহারা মর্জিনা আক্তার নামে এক নারীর ছেলেকে সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেন মোজাম্মেল ও তার সহযোগী জামাল উদ্দিন।  তারা ওই নারীকে জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমানের স্বাক্ষর ও সিলযুক্ত ভূয়া একটি সুপারিশপত্র সরবরাহ করেন।  গত ২ ফেব্রুয়ারি জামাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সুপারিশপত্রটি মর্জিনাকে দিতে গেলে কর্মকর্তারা তাকে ধরে ফেলেন।  এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করায় পলাতক মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
প্রতারণার শিকার মর্জিনা আক্তার জানান, ‘আমার ছেলে লটারিতে না আসায় সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি।  আমি আগে থেকে পরিচয়ের সূত্রে জামালকে কিছু করা যায় কি না দেখতে বলেছিলাম।  জামালের বন্ধু মোজাম্মেল।  তারা নিজেরা যোগসাজশ করে ডিসি’র সুপারিশ এনে দেওয়ার কথা বলে জামাল আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং মোজাম্মেল ৬ হাজার টাকা নেয়।  পরে একটা সুপারিশপত্র দেয় যেটা ভুয়া।  আমি মুসলিম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে বুঝতে পারি সেটা নকল।  তখন আমি জেলা প্রশাসনে গিয়ে অভিযোগ করি’।
জিজ্ঞাসাবাদে মোজাম্মেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি নেজাম জানান, ‘২০০৮ সালে বোয়ালখালী থানায় মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়েছিল।  সে নিজেকে ২৫তম বিসিএস’র পুলিশ ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে।  কয়েকদিন আগে এই পরিচয়ে কাস্টমসের এক কর্মকর্তাকে ফোন করে গাড়ি ছাড়ানোর তদবির করেন। ওই কর্মকর্তা আমাদের একজন এএসপি’র স্ত্রী।  তিনি বিষয়টি আমাদের জানান।  একইভাবে জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখায়ও সে প্রভাব বিস্তার করে।  নৌবাহিনীর কমান্ডার পরিচয়ে প্রতারণার কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি।  এরপর একটি ইউটিউব চ্যানেলের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান পরিচয়েও বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি’।
কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আইয়ূব উদ্দিন বলেন, ‘মোজাম্মেলের বিভিন্ন নাম ও পদবিতে অন্তঃত ১০টি ভিজিটিং কার্ড আমরা পেয়েছি।  মোজাম্মেল বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে।  নাম-পদবি সব ঠিক রেখে শুধু মোবাইল নম্বর বদলিয়ে একই ধরনের কার্ড সে তৈরি করে।  সেই কার্ড দেখে সে যে ভূয়া সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।  এভাবেই সে প্রতারণা করে বেড়ায়’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর