হেফাজতের মামুনুল হক সম্পর্কে যা বললেন সেই নারীসঙ্গীর ছেলে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘আপনারা কারো অন্ধ ভক্ত হয়েন না।  কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস কইরেন না।  কারণ সবারই আড়ালে আরেকটা চেহারা থাকে।  এই লোকটা আলেম নামধারী মুখোশধারী একটা জানোয়ার।  তার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই।  সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়’- হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক সম্পর্কে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে আব্দুর রহমান।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আব্দুর রহমানের তিন মিনিট দুই সেকেন্ডের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে।  আব্দুর রহমান তার ছোট ভাই তামিমকে নিয়ে বাবার সঙ্গে খুলনায় বাস করেন বলে জানা গেছে।
আব্দুর রহমানকে ভিডিওতে বলেন, ‘আমি তো অলরেডি বড় হয়ে গেছি, অনেক কিছু শিখছি, জানছি, ম্যাচুরিটির একটা ভাব আইছে।  আমি কিছুটা সহ্য করে নিতে পারি, কিন্তু আমার তো একটা ছোট ভাই আছে, তের-চৌদ্দ বছর বয়স।  কেবল উঠতি বয়স।  এই সময়ে মানুষের কত কথা শোনা লাগতেছে।  সমাজের সামনে আইসা মুখ দেখাইতে পারতেছি না।  আমার ছোট ভাইটা কাল রাতে যখন এই ঘটনটা ঘটলো, ও কোনোদিন আমি দেখি নাই রাত ৩-৪টা পর্যন্ত জাইগা রইছে।  কাল দেখি ওর চোখে কোনো ঘুমই নাই।  ও বিষয়টা নিয়ে টোটালি মেন্টালি শকড হইছে।  ও বাসা থেকে বের হয়ে গেছিল।  বাসায় থাকলে কি উল্টা-পাল্টা করবো আমি নিজেরও জানি না, এইটা বইলা বের হয়ে গেছে’।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘আরও বলতে হয়, এটা আমি বলবো যে, আমার বাবার কর্মের ফল।  আমার বাবা মানুষকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।  পাগলের মতো ভালোবাসে।  ওই লোকটা (মাওলানা মামুনুল হক), কিছুদিন আগে মোল্লারহাটে একটা মাহফিল ছিল।  সেখানে পুলিশ তাকে করতে দেবে না।  সে একটা জায়গায় লুকায়া ছিল।  আমার বাবা সেটা দেখে আইসা কীভাবে যে কানছে।  তার আগেই বিষয়টা আমি জানছি যে, আমার মায়ের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল।  আমি তখন হাসতে ছিলাম যে, এই লোকটা যার জন্য অঝোর ধারায় কানতেছে আর ওই লোকটা (মাওলানা মামুনুল হক) এই লোকটার (বাবা শহীদুল ইসলাম) সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতেছে।  তারপরে যখন ওনাকে জেলে নিল, মাওলানা মামুনুল হককে জেলে নিল, তখন আমার বাবা থানার ওসি কামরুজ্জামানকে বলে যে, আমাকে রেখে ওনাকে ছেড়ে দেন।  কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষকে এই কথা বলতে পারে।  আর সেই লোকটা কীভাবে গাদ্দারি করলো’।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘আরও আগের ঘটনা যখন ডিভোর্স হয়নি, আমি তখন অনেক ছোট।  আমার ছোট ভাই আরও অনেক ছোট, দুগ্ধ শিশু ছিল।  তখন আমার বাবা বাসায় ছিলেন না।  তখন আমি ছিলাম।  আমি ঘুমায়া ছিলাম নাকি বাইরে ছিলাম।  আমার মা নাকি আমার ছোট ভাইকে দুগ্ধ পান করাচ্ছিল, তখন উনি আমার মায়ের রুমে ঢুকে গিয়ে একটা কুপ্রস্তাব দেয়।  কিন্তু আমার মা সেটা প্রত্যাখান করেছিল, না এটা কোনোদিনই সম্ভব না।  আপনি তো ঠকাচ্ছেন, আপনার কাছের মানুষটাকে, বন্ধুকে।  সে তখন ফিরে এসেছিল।  কিন্তু তার একটা তখনই মনে কামভাব ঢুকে গেছে।  সে লোভ সামলাইতে পারতেছিল না।  সে একটা সুযোগে ছিল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে সে এইটা বুঝতে পারে নাই।  যখনই সুযোগ পাইছে এনাদের মধ্যে ডিসট্যান্স বাড়াইয়া দিছে।  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো ঝগড়া হবেই।  সে তখনই নক করছে।  তখন দুই জনের মধ্যে আরও ডিসট্যান্স বাড়াইয়া দিছে।  এইভাবে করে সে একটা পরিবারের খুশি, ভালোবাসা, একটা পরিবারের মধ্যে যে মিলমিশ সম্পর্ক পুরোপুরি সে ধ্বংস করে দিছে।  আরও যে এভাবে কত মানুষের, কত পরিবারের ভালোবাসা যে ধ্বংস করে দিছে এর কোনো ঠিক নাই’।
মাওলানা মামুনুল হকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করবো, এর যেন সঠিক বিচার হয়।  আপনারা কারও অন্ধ ভক্ত হয়েন না।  কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস কইরেন না।  কারণ সবারই আড়ালে আরেকটা চেহারা থাকে।  এই লোকটা আলেম নামধারী মুখোশধারী একটা জানোয়ার।  তার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই।  সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়।  আমার আর কিছু বলার ভাষা নাই’।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসঙ্গীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীরর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক।  পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।  মামুনুল হক ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা তৈয়বা বলে জানায়।  বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ওই রিসোর্টে ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।  এরপর একে একে মামুনুল হকের ইস্যুতে একাধিক অডিও ফাঁস হয়।  যেখানে মামুনুল হক তার স্ত্রীকে ওই নারী শহীদুল ইসলামের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ