বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  রবিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪ টার দিকে চমেক হাসপাতাল মর্গে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, আজ (রবিবার) বিকেল ৪ টার দিকে যার যার স্বজনদের উপস্থিতিতে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার বাঁশখালীর গণ্ডামারা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  এতে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকে।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের ফারুক আহমদের ছেলে মাহমুদ হাসান রাহাত (২২), চুয়াডাঙ্গার অলিউল্লাহর ছেলে মো. রনি হোসেন (২৩), নোয়াখালীর আব্দুল মতিনের ছেলে মো. রায়হান (১৯), চাঁদপুরের মো. নজরুলের ছেলে মো. শুভ (২২) এবং বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনার আবু ছিদ্দিকির ছেলে মাহমুদ রেজা (১৯)।
হতাহতের ঘটনায় একই দিন দিবাগত রাতে দুটি মামলা হয়েছে।  এর মধ্যে থানার এক কর্মকর্তা বাদি হয়ে অজ্ঞাত আড়াই হাজার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।  অপর মামলা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদি হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ৫০ জনকে আসামি করে করেছেন।
ঘটনার পর শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।  সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি।  চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পুলিশের একজন, কলকারখানা অধিদফতর থেকে একজন এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একজন সদস্য নেয়া হয়।  কমিটিকে আগামি সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঁশখালীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে।  নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে তিন লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তার করা হবে’।
এছাড়া ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকেও গঠন করা হয়েছে আরেকটি তদন্ত কমিটি।  ওই কমিটিতে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাশেন ও ক্রাইম) জাকির হোসেন, রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) নেছার উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কবির হোসেনকে।  তাদেরকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, ঘটনার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।  বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।  গ্রেফতার আতঙ্কে এক প্রকার পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে এলাকাটি।  শ্রমিকরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।  গতকালের ঘটনার পর এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
বাঁশখালীর উপজেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিমের দশ কিলোমিটার পরেই গণ্ডামারা ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট।  ২০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প নির্মাণ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ এস আলম ও চীনের সেফকো ত্রি-ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন।  প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক।  স্থানীয় শ্রমিক আছে প্রায় ৫০০ জন।  ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে প্রকল্পটি।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ