দুই নারী সঙ্গীর বিষয়ে পুলিশকে যা বললেন মামুনুল

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
গ্রেফতারের পর হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি তিনটি বিয়ে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।  জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল বলেছেন প্রথম স্ত্রী বাদে বাকি দুই স্ত্রীকে তিনি ‘কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন।  স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার দিতে পারবেন না মৌখিক এই শর্তেই তাদের বিয়ে করেছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন তিনি।  মামুনুল হকের দাবি, তার দেওয়া শর্ত মেনেই দুই নারী তার সঙ্গে শরীয়তের বিধান মতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২ টায় মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় হেফাজত নেতা মামুনুল হককে, যিনি সম্প্রতি এক নারীসঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন।
এর আগে গত ২৬-২৮ মার্চ মোদীবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে রাজধানী ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যপক তান্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।  পুলিশ বলছে, বেপরোয়া এই তান্ডবের নেপথ্যে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের উস্কানি ছিল, যার মধ্যে মামুনুল হক ছিলেন অন্যতম।  যদিও এসব ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের কারও নাম ছিল না।
গত ৩ এপ্রিল রিসোর্টকাণ্ডের পর হেফাজতের বেপরোয়া উত্থান ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা দেয় সরকার।  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও নড়েচড়ে বসে, নতুন করে দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের।  শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান।  একই সঙ্গে হেফাজতের শীর্ষ নেতা মামুনুল হকের একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ থাকার বিষয়টিও সামনে চলে আসে।
গত ১১ এপ্রিল থেকে হেফাজতের মধ্যমসারির ৮ জন নেতাকে গ্রেফতারের পর গতকাল গ্রেফতার করা হয় মামুনুল হককে।  গ্রেফতারের পর তাকে প্রথমে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয় এবং পরে তেজগাঁও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।  রাতে তাকে হস্তান্তর করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা তাকে মামলা, জিডিসহ সহিংসতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।  তাকে তিন তিনটি বিয়ে করা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  বিয়ে দাবি করলেও প্রথমটি বাদে বাকি দুই বিয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।  তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
এদিকে রাতে মামুনুল হককে থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে আরেক দফা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।  এসময়ও তাকে সহিংসতার পাশাপাশি তিন বিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্ত্রীকে তিনি শরীয়ত সম্মত ও প্রচলিত আইন মেনে বিয়ে করেছেন।  কিন্তু বাকি দুই নারীকে বিয়ের দাবি করলেও কাবিননামা নেই বলে জানান তিনি।  এই দুই নারীকে তিনি ‘কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন বলে দাবি করেন মামুনুল হক।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হকের দাবি, জান্নাত আরা ঝর্ণার বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি তার অভিভাবকত্ব নেন।  এসময় তিনি জান্নাতকে পূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবেন না এমন মৌখিক শর্তে বিয়ে করেন বলে দাবি করেন।  মামুনুল হকের দাবি, তার শর্ত জান্নাত আরা মেনে নিয়েছিল।  দুই বছর ধরে তিনি জান্নাত আরার ভরণ-পোষণ ছাড়াও ব্যবসা করার জন্য মূলধন দিয়েছেন এবং কারিগারি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে রিসোর্টকাণ্ডের ঘটনারও বর্ণনা দেন।  মামুনুল বলেন, ব্যস্ততার কারণে জান্নাতের সঙ্গে তার নয় মাস ধরে দেখা-সাক্ষাত হচ্ছিল না।  জান্নাত তাকে সময় দেয়ার জন্য বারবার বলছিল।  ৩ এপ্রিল তার বি. বাড়িয়া যাবার কথা ছিল।  কিন্তু বি. বাড়িয়া যাওয়া বাতিল হলে তিনি ওই দিন জান্নাতকে নিয়ে কোথাও একটু একান্ত সময় কাটাতে চেয়েছিলেন।  ঘটনার দিন সকালে গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে জান্নাতকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টের দিকে রওয়ানা দেন তিনি।
স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে কেন বিয়ে করেছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ার শর্ত দিয়েই তিনি বিয়ে করেছিলেন।  ইসলামে এটা জায়েজ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।  প্রথম স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ‘শহীদুল ভাইয়ের ওয়াইফ’ বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামুনুল হক জানান, বিষয়টি জানার পর তার প্রথম স্ত্রী যদি স্ট্রোক বা খারাপ কিছু একটা করে ফেলে সেই আতঙ্ক থেকে মিথ্যা বলেছিলেন তিনি।
তৃতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লিপিকে বিয়ে করা নিয়েও একই বক্তব্য ছিল মামুনুল হকের।  তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাতুল ফেরদৌস সম্পর্কে মামুনুল বলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে একসঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স করার সময় তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে।  এরপর জান্নাতুলের বিয়ে হয়ে যায়।  কিন্তু প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাকেও স্ত্রীর অধিকার না দেয়ার মৌখিক শর্তে তাকে বিয়ে করেন তিনি।  তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার প্রথম স্ত্রী কিছুই জানতেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, মামুনুল হককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  সোমবার (১৯ এপ্রিল) তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে আনা হবে।  রিমান্ডে তাকে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ