মুনিয়া-আনভীর ঘটনা, আবারও আলোচনায় সেই পিয়াসা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।  ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার।  প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা।  কিন্তু সেই পিয়াসার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগী।  চার বছর পর আবারও আলোচানায় সেই পিয়াসা।
গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের হয়েছে, তাতেও পিয়াসার নাম রয়েছে।  পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে তারা পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা সব তদন্ত করে দেখছি।  ঘটনায় সম্পৃক্ত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘গত ২৩ এপ্রিল সায়েম সোবহান আনভীর মুনিয়াকে হঠাৎ বকাঝকা করেন।  মুনিয়া কেন ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছে এবং ছবি তুলেছে।  ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে।  এটা আবার পিয়াসা দেখেছে।  পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক ফ্রেন্ড ও পরিচিত।  পিয়াসা আনভীরের মাকে সব বলে দেবে।  আর আনভীরে মা বিষয়টি জানতে পারলে মুনিয়াকে মেরে ফেলবে বলেও মামলার এজাহারে বলা হয়েছে’।
 এজাহারে পিয়াসার নাম উল্লেখ করায় প্রশ্ন উঠেছে কে এই পিয়াসা?  পরে অনুসন্ধানে জানা যায় এই পিয়াসা হলেন ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, যিনি চার বছর আগেও রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচনায় এসেছিলেন।  বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জুয়েলারি শপ আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ছিলেন ওই ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি।  পিয়াসা ছিলেন সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী।  রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই সাফাতের সঙ্গে পিয়াসার ডিভোর্স হয়েছিল।
সেসময় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে পিয়াসাকে অভিযুক্ত করেছিলেন।  পরে অবশ্য তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় বলে খবর প্রকাশ পায়।  ধর্ষণের শিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে সহায়তার কথা স্বীকার করলেও কয়েকদিনের মাথায় পিয়াসা তাদের মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।  এজন্য পিয়াসার বিরুদ্ধে দুটি সাধারণ ডায়েরিও করেন তিনি।
ওই ঘটনার পর দিলদার আহমেদ তার সাবেক পুত্রবধূ পিয়াসার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।  পিয়াসাও সাবেক শ্বশুর দিলদার আহমেদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছিলেন।
কী বললেন পিয়াসা?
এনটিভির সুপার হিরো, সুপার হিরোইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শোবিজ জগতে আসা ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা নতুন করে আলোচনায় আসার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই প্রতিবেদক।  বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় যে পিয়াসার কথা বলা হয়েছে সেই ব্যক্তি আপনি কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি।  আমিই বিষয়টি আনভীর ভাইয়ের মাকে বলেছি।  আনভীর ভাইয়ের আগের সংসার রয়েছে।  সেটি বাঁচানোর জন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম।  এতে কি আমার অপরাধ হয়েছে?’
ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা আরও বলেন, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে আরও অনেক কাহিনি আছে।  এই মেয়ে (মুনিয়া) তো একটা সাইকো ছিল।  আনভীর ভাই বিবাহিত জানা সত্ত্বেও কেন তার দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেছিল?  তাকে তো আগে আমরা কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।  সে লোভী।  সে একটা… (প্রকাশযোগ্য নয়)’।
এই ঘটনায় চট্টগ্রামের হুইপপুত্র শারুণের যোগসাজস রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।  এ সংক্রান্ত কথপোকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশটও পাঠান এই প্রতিবেদকের কাছে।  সেখানে মুনিয়া শারুণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমার কিছু হয়ে গেলে আপনি আমার পরিবারকে একটু দেইখেন’।  শারুণকে কিছু কল রেকর্ড ও স্ক্রিনশট দিয়ে মৃত্যুর পর এসব সবাইকে দেওয়ার জন্য বলেন মুনিয়া।
এই কথপোকথনের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে শারুণ চৌধুরী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘এগুলো বোগাস।  মূল ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় নেওয়ানোর জন্য এসব করা হচ্ছে।  মুনিয়ার মোবাইল তো এখন পুলিশের কাছে।  যা করার ফরেনসিক করুক।  আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম যদি এসব কেউ প্রমাণ করতে পারে’।  মুনিয়াকে চিনতেন না বলেও দাবি করেন শারুণ।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ