দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিষপানে পিতা ও পুত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে তারা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ধারণা করলেও বেশ কয়েকটি কারণে তা তদন্ত করে আসল কারণ বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের এজাহার ডাক্তারের বাড়ি এলাকার একটি পুকুর পাড়ে এই ঘটনা ঘটে। বিষপান করে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানো অবস্থায় একটি শিশু ও তার পিতাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন চিকিৎসার জন্য সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটির পিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখানে নেয়ার পর তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বালাঘাটা এলাকার সিকদার পাড়ার আমিন শরীফের ছেলে নুরুল কবির (৩৮) ও নুরুল কবিরের ছেলে মোহাম্মদ ছানি (৯)। নিহতদের বাড়ি বান্দরবানের বালাঘাটা হলেও তারা এখানে কেন বিষ পান করলো সেই কারণ এখনো অজানা সবার।
তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নিহত নুরুল কবির প্রবাসে থাকার সুযোগে তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার (২৫) বালাঘাটা এলাকার ওসমান গনির ছেলে জমির উদ্দিনের (২৭) এর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত মাসের শুরুর দিকে নাছিমা আক্তার নিজ বাড়িতে পরকীয়া প্রেমিক জমির উদ্দিনসহ এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়ে। প্রবাসে থাকা নুরুল কবির এমন তথ্য জানতে পেরে দ্রæত দেশে ফিরে স্ত্রীর কাছে দীর্ঘদিন প্রবাস থেকে পাঠানো অর্থ ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে স্বামীর সাথেও বিরোধে জড়িয়ে পড়ে নাছিমা আক্তার। এই বিরোধের সূত্র ধরে নুরুল কবির স্ত্রী নাছিমা আক্তার ও তার পরকীয়া প্রেমিক জমির উদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই থেকে ছেলে ছানিকে নিয়ে আলাদা থাকেন নুরুল কবির। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বিষপান করা অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা নুরুল কবির ও তার ছেলে কখন কিভাবে বিষ পান করে ঘটনাস্থলে আসলো- সে বিষয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, নুরুল কবিরের আসল বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের পশ্চিম বাইনজুড়ি গ্রামে। বসবাস করতো বান্দরবানের বালাঘাটায়। বেশ কয়েক দিন আগে ফার্ণিচারের কাজ করার জন্য দস্তিদার হাটে আসেন। বিষপান করে কাতরানো অবস্থায় বাবা-ছেলেকে দেখে লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাদের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ছেলে ছানিকে মৃত ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুরুল কবিরকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেই নুরুল কবিরের মৃত্যু হয়। লাশের ময়না করা হচ্ছে। ময়না তদন্তে বিষপানে মৃত্যু নাকি অন্য কিছু তা জানা যাবে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, বিষ পানে আত্মহত্যা করা নুরুল কবিরের স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর তিনি (নুরুল কবির) স্ত্রীকে ফেরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বার বার ব্যর্থ হওয়ায় ছেলেকে বিষপান করিয়ে নুরুল কবির নিজেও বিষপান করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তবে আরো একাধিক বিষয় সামনে রেখে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
ডিসি/এসআইকে/এসইউ