গণপরিবহন সব কি তেলে চালিত!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘এখন থেকে বাসে ওঠার আগে তাহলে (বাসের) নিচে দেখে নিতে হবে। দেখতে হবে সিলিন্ডার লাগানো আছে কিনা; গ্যাসে চলছে না ডিজেলে’- রসিকতা করেই কথাগুলো বলছিলেন আশরাফ হোসেন নামের এক যাত্রী। সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে গাবতলীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশের সব গণপরিবহনকি তেলেই চালিত? তাহলে সরকারের যে প্রচারণা সিলিন্ডারে চলছে গণপরিবহন সেগুলো কই? সিএনজি অটোরিকশা থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরণের গণপরিবহনে ৩০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না। তারা সবাই সংঘবদ্ধ। আমরা আমরা জনতা হচ্ছি সবার কলইয়ের বলদ। কোনো মূল্য নেই জনগণের। কোনো অভিযোগ করার জায়গা আমাদের নেই। অভিযোগের প্রতিকার করারও নেই কেউ।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে যায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। গতকাল রবিবার (৮ নভেম্বর) বিআরটিএ’র সঙ্গে বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে তুলে নেওয়া হয় ধর্মঘট। বৈঠকে আরও জানানো হয়, সিএনজিচালিত বাস কিংবা মিনিবাসের ভাড়া বাড়েনি, তাই এসব পরিবহনে নতুন ভাড়া আদায় করা যাবে না।
তিনদিন যাত্রীদের ভোগান্তির আজ সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই চলছে দূরপাল্লাসহ সবধরনের গণপরিবহন। বাসের যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, গ্যাসে চালিত গাড়িতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গাবতলীর যাত্রী আশরাফ গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়েই রসিকতার করে কথাগুলো বলছিলেন। পরক্ষণে আবার প্রশ্ন করেন, ‘আসলে কোনটা ডিজেলচালিত আর কোনটা গ্যাসচালিত, এটা বুঝবো কীভাবে? সবগাড়িতে কী বোঝার উপায় আছে? আর সবাই কী এটা বুঝবে? আসলে সব ভোগান্তি আমাদের সাধারণ মানুষের’।
এবার তার সঙ্গে যোগ দিলেন বাসের অপেক্ষায় থাকা আরেক যাত্রী শহীদ। আশরাফের কথা রেশ ধরেই তিনি বলেন, ‘সব দায় আমাদের জনগণেরই। বাসে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করতে হবে- সিএনজি না ডিজেল? বাসের ভেতর থেকে তো বোঝার কোনো উপায় নেই। বাসের সুপারভাইজার কিংবা হেলপার যা বলবে আমাদের তাই মেনে নিতে হবে’।
বাসের চালকরাও বলছেন, বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেল চালিত। বাসের পেছনের নিচের অংশে সিলিন্ডারের উপস্থিতি থাকলে বুঝতে হবে সেটা সিএনজিচালিত। এছাড়া চালকের পাশে একটি মিটার থাকে, সেটা দেখেও বোঝা যায়। তবে সাধারণ যাত্রী হিসেবে সবাই এ বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। বিষয়টি বুঝতে চালক কিংবা হেলপারের বা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিতে হবে।
যাত্রীরা কীভাবে সিএনজিচালিত বাস চিনবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তবে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখভালের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযান পরিচালনা করবেন। কোনো অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান জানান, ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে চলা ২৫টি কোম্পানির বাসের মধ্যে ২০ কোম্পানির বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা। তথ্যে দেখা গেছে- তখনই ছিল শতকরা ৮০ ভাগ বাস সিএনজিতে কনভার্ট করা । এ সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে বলে আমাদের ধারণা। আর পরিবহন মালিকরা পরিবহন সেবা নয়, পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা কৌশলী হবেই সেইসাথে বিআরটিএ কে আরো কৌশলী হতে হবে। এছাড়া বাসের ভিতরে ভাড়ার চার্ট টাঙ্গানোর সাথে সাথে বাসটি ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত তার তথ্য রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ধর্মঘটে ডিজেল চালিত বাসের মালিকদের সঙ্গে গ্যাসে চালিত বাসের মালিকরাও তাদের বাস বন্ধ রেখেছিলেন। তারা (গ্যাসে চালিত বাস মালিক) কোন দাবিতে এমনটা করলেন এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, তারাও ভুক্তভোগী। তারা পরিস্থিতির শিকার। মহানগরে যে পরিমাণ বাস ও মিনিবাস চলে তার এক থেকে দুই শতাংশ সিএনজিচালিত বলেও দাবি করেন পরিবহন মালিকদের এই নেতা।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তারা ধর্মঘট করেছিলেন। যা মূলত এক প্রকার জোর করে আদায় করা। আর জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা’।

ডিসি/এসআইকে/এমএকে