মোবাইল চোরচক্রের হোতা ওসির আপন চাচাত ভাই : কাউন্সিলর রুমকি

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (সংরক্ষিত-৭) রুমকি সেন গুপ্তের দামি মোবাইল ফোন হারানোর পর থানা পুলিশে দৌঁড়েও মেলেনি কোনো হদিস।  উল্টো হতে হয়েছে হয়রানি, শুনতে হয়েছে কটু কথা।  এমনকি যে পুলিশ মোবাইল উদ্ধার করার কথা তাদের আশ্রয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধেই হয়েছে মানববন্ধন।  যার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ এনেছেন সেই মোবাইল চোরচক্রের হোতা আব্বাস উদ্দিন সিএমপির কতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নেজাম উদ্দিনের আপন চাচাত ভাই বলে তিনি দাবি করেছেন।  ফলে নিরুপায় হয়ে এবার হারানো মোবাইল উদ্ধারে সাংবাদিকদের সামনে এসে আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আজ সোমবার (৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত।  এসময় হারিয়ে যাওয়া মোবাইলে সংরক্ষিত থাকা পারিবারিক বিভিন্ন স্মৃতির কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি ও তার স্বামী প্রেমাংশু সেনগুপ্ত।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেমাংশু সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমার মোবাইলের দরকার নাই।  যদি পারেন আমার মায়ের স্মৃতিগুলো আমাকে ফিরিয়ে দেন।  আমার মায়ের স্মৃতিগুলো আমার মোবাইলে ছিল।  করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার মা মারা গেছে।  ৫-৭ দিন আইসিইউতে ছিল।  আমার মায়ের সে সময়ের ছবি ও ভিডিওগুলো ছিল’।
এসময় পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার দোকান সেখানে।  শুনেছি কাল অভিযুক্তরা মানববন্ধন করেছে।  এর আগেও মোবাইল চুরি ও উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।  এ ধরণের লোকেরা যে কোনো কিছু করতে পারে।  আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত’।
সংবাদ সম্মেলনে রুমকি সেনগুপ্ত বলেন, ‘গত ৬ অক্টোবর আমার স্বামীর মোবাইল হারিয়ে যায়।  এ বিষয়ে সেদিন কোতোয়ালি থানায় জিডি করতে গেলে ওসি জিডি গ্রহণ না করে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।  পরে আমি নিজে গেলে ওসি নেজাম আমাকে বলেছেন এটাতো প্যানেল মেয়রের গিফট করা মোবাইল।  হারিয়ে গেছে তো কি হয়েছে?  অন্যজনে আরেকটা গিফট দিবে।  এ বিষয়ে উনি কোনো জিডি বা অভিযোগ না নিয়ে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন’।
মোবাইল চোর আব্বাস উদ্দিন ওসি নেজাম উদ্দিনের আপন চাচাতো ভাই উল্লেখ করে এ নারী কাউন্সিলর বলেন, ‘পরে খোঁজ-খবর নিয়ে চোরদের নাম ওসি নেজামকে জানানো হলে তিনি আসামি ধরে থানায় নিয়ে যেতে বলেন।  পরে আমরা জানতে পারি শনাক্ত হওয়া চোর আব্বাস উদ্দিন ওসি নেজাম উদ্দিনের আপন চাচাতো ভাই।  আব্বাস উদ্দিনের দোকানে চোরাই মোবাইল বিক্রি ও দামি মোবাইল ভারতে পাচার হয়’।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার দুপুরে তামাকুমুন্ডি লেইনের সামনে কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তের ‘হয়রানি’ থেকে বাঁচতে মানববন্ধন করেন তামাকুমুন্ডি লেইনের মোবাইল ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধনে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, গত ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তের স্বামী প্রেমাংশু সেনগুপ্তের মোবাইল ফোন সেটটি হারিয়ে যায়।  তবে অভিযোগের প্রমাণ না থাকায় সেদিন থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা মামলা নেয়নি পুলিশ।
গত ৩ নভেম্বর ওই মহিলা কাউন্সিলর নিজের প্রভাব ও ক্ষমতা খাটিয়ে ব্যবসায়ী মো. আব্বাস উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই ব্যক্তির নামে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।  মামলার এজাহারে বাদি মো. আব্বাস উদ্দিনকে ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।  নেতৃবৃন্দ এরূপ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
তামাকুমুন্ডি লেইন মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আরিফুর রহমান তাদেরকে ব্যবসা করার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।