ইউপি ভোটে সহিংসতায় দুই মৃত্যু, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩৮ 

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল, সংঘর্ষ আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ সমমনা অধিকাংশ দল নির্বাচনে না থাকলেও নিজেদের মধ্যেই ব্যাপক পক্ষ-বিপক্ষে ভাগ হয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং কক্সবাজারের তিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির ৩৬ জন। প্রতিপক্ষের হামলায় মৃত্যুবরণ করেছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ১ জন এবং কক্সবাজারের একজনসহ মোট ২ জন। অন্যদিকে মিরসরাই উপজেলায় কারচুপির অভিযোগ এনে প্রতিদ্ব›দ্বীপ্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘোষণা, কেন্দ্র দখল করে নির্দিষ্টপ্রার্থীর পক্ষে ভোট করাসহ নানান অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপি ভোট গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা।  
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তবে মিরসরাইয়ে বড় ধরণের কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। 
আমাদের ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক ব্যবসায়ী ছুরিকাঘাতে নিহত এবং একজন সদস্য প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ প্রার্থীদের অন্তত ১১ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত ব্যবসায়ী হলেন মোহাম্মদ শফি (৫০)। তিনি গোপাল ঘাটা এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে। গুলিবিদ্ধ মুহাম্মদ আজাদ লেলাং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী।
এছাড়াও আহতরা হলেন আবু ইউসুফ (২৩), আহসান (৩০), মো. আশরাফ (২৮), মো. আজাদ হোসেন (৩৬), ইব্রাহিম (৫৮), আফিফ (২২), ইকবাল হোসেন (৩৩), মারুফ মিয়া (২৫), মো. রাসেল (২০), সাকিবুল (১৮)। তারা সবাই প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক। তাদের মধ্যে ৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোট গ্রহণ শুরুর পর প্রথম চার ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংসতা শুরু হয়। এর মধ্যে লেলাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে দুই সদস্য প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি স্থানীয় আনন্দ বাজারের একজন ব্যবসায়ী। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে গোপালঘাটা এম আরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী ইফতেখার উদ্দীন মুরাদ (ফুটবল মার্কা) ও জামাল পাশা (মোরগ মার্কা) সমর্থকদের সংঘর্ষের মাঝে ছুরিকাঘাতের এ ঘটনা ঘটে।
দুপুরের দিকে লেলাং ইউনিয়নের লালপুল তোফায়েল আহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রার্থী মো. আজাদ গুলিবিদ্ধ হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুই সদস্য প্রার্থী মো. বেলাল ও মো. সরোয়ারকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন।
এছাড়া ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে দিনভর সরেজমিনে ২৩টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। প্রত্যেকে স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন। অনেকে ভোট দিতে পেরে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকটি কেন্দ্র দখল নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে লেলাং এ ১ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। একজন গুলিবিদ্ধ এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করেছে। এছাড়া সব ভোট কেন্দ্র ছিল শান্ত’।
ইউপি নির্বাচনের সমন্বয়কারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে অপ্রীতিকর কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে’।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়ার মধ্যেই সারাদিনব্যাপি ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। 
উপজেলার বাঁশবাড়ীয়ায় ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩নং ওয়ার্ডস্থ বাঁশবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও ৭নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকুল বায়তুল উলুম ইসলামীয়া আদর্শ এতিমখানা কেন্দ্রে  ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। নির্বাচনী সহিংসতায় পুলিশের শটগান ও রাবার বুলেটের আঘাতে ৭ জন আহত এবং নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় আরো ১৪ জনসহ মোট ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দেওয়া হয় ও ১৪ জনকে সীতাকুÐ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসকেরা। 
আহতরা হলেন উত্তর বাঁশবাড়ীয়া এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে মো. লিটন (৩০), হাসিম মিয়ার ছেলে মহিন উদ্দিন (৩৭), বাদশা মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (৬০), হাসিম মিয়ার ছেলে মো. জাফর উদ্দিন (৩৫), আইযুব আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৩), ছবির আহাম্মদের ছেলে নুর উদ্দিন (৩৫), এসহাকের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (২৫), আমিনুল হকের ছেলে ইমাম হোসেন (২৭), আলম মিয়ার ছেলে নুর উদ্দিন (৫০), হাজি মহরম আলীর ছেলে মো. হানিফ, এসকান্দরের ছেলে মো. সাদেক (২৮), জান্নাতুল জিন্নাত (২৫) ও ডলি আক্তার (২৩)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এরমধ্যে ২ জন নারী, বাকিরা পুরুষ ও বৃদ্ধ। এদের ১৮ জনের বাড়ি বাঁশবাড়ীয়ায়, বাকি ৩ জনের বাড়ি মুরাদপুর, ফকিরহাট ও বার আউলিয়া এলাকায়।
অন্যদিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের গন্ডগোলোর পর ফুটবল প্রতীকের মাহবুব আলম ও ফোরকান এবং সোনাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে আটক রেখেছে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বলে থানা সূত্রে জানা যায়।
সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, ‘সকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ১৪ জন আহত রোগীকে আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তারমধ্যে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ১২ জন এবং বাকি ২ জন মুরাদপুরের ফকিরহাট ও বার আউলিয়া এলাকার। আহতদের মধ্যে ৬ জন রাবার বুলেটে আহত ও ১ জন গুলিতে আহত ছিল। আহতদের মধ্যে আমরা ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেছি’।
মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয়ধাপের নির্বাচনে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় আগেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ১৩ ইউপিতে ভোট হয়েছে শুধু মেম্বার নির্বাচনের জন্য, বাকী ৩ ইউপিতে প্রতিদ্ব›দ্বীপ্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন হয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপকজাল ভোট, প্রভাব বিস্তার ও কারুচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন দুই স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী। এছাড়াও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানপ্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর গাড়িতে পাথর মেরে গ্লাস ভাঙা এবং কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মারার অভিযোগও পাওয়া গেছে। 
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ওয়ার্ড সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদেও বিভিন্ন কেন্দ্র দখলসহ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন ইউপি মেম্বারপদে নির্বাচনে থাকা নারী ও পুরুষ মেম্বারপ্রার্থীরা। ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী জহুরুল হকের উপর হামলার ঘটনাও ঘটে। ৬নং ওয়ার্ডে জাল ভোট দেওয়ার সময় বহিরাগত ১৪ জনকে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে। ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জিন্নাতবিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামাল উদ্দিন (টিউবওয়েল) ও শিপন (তালা) এর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গোলাগুলিও হয়। এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও গুলি ছুঁড়ে। এঘটনায় মেম্বার প্রার্থী শিপনসহ ৪ জনকে আটক করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। 
কক্সবাজার প্রতিনিধিরা জানান, কক্সবাজারে বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে ৩ উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট গ্রহণ। সহিংসতায় সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়ায় একজন নিহত ও দুই পুলিশসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। এতে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। নিহত আকতারুজ্জামান খুরুশকুল ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যপ্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোট ভাই।
অন্যদিকে উখিয়ার হলদিয়া পালংয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। সেখানে ১টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া সদরের চৌফলদন্ডীতে একজন এজেন্ট ও একজন পুলিশের এএসআই আহত হওয়ার খবর পাওয়ো গেছে। 
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপির স্থগিত ৫ নম্বর কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী সরোয়ার বাদশা, তার ভাগিনা ইমরান, আবদুর রহিম, ফাতেমা, রোজিসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মেম্বার প্রার্থী বাদশাসহ ৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক। তাছাড়া রামুর জোয়ারিরনালায় তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর গন্ডগোল হয়েছে বলেও জানা গেছে। 
উখিয়ার জালিয়াপালং এর একটি কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে জোর করে সীল মারার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। 
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার ঝিলংজা, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী ও ভারুয়াখালি এবং পিএমখালীর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুরুশকুলে তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী  শেখ কামাল ও আবু ছিদ্দিকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আকতারুজ্জামান পুতু (৩০) নামের একজন নিহত হয়। এছাড়া দুই পুলিশসহ ৬ জন আহত হয়েছে। এই কারণে সেই ভোট কেন্দ্রে ভোটার যায়নি। তাই ভোট গ্রহণও স্থগিত রাখা হয়েছে ওই কেন্দ্রের। 
এছাড়া চৌফলদন্ডীর ইউপির ৩, ৭, ও ৮ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে হট্টগোল হয়। এতে এক মহিলা সদস্যের এজেন্ট এবং পুলিশের এক এএসআই আহত হয়েছে। 
রামু উপজেলার ফতেখারকুল, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, রশিদনগর , জোয়ারিরনালা, ঈদগড়, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল, কাওয়ারখোপ ও খুনিয়াপালংয়ে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই উপজেলার শুধুমাত্র জোয়ারিয়ারনালায় নৌকার প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা আবছার কামাল ও এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের পিএস খোকনের বাবা বিএনপি নেতা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) নুরুল কবিরের কয়েকদফা বাকবিতান্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অন্য ইউনিয়নে কোনো হট্টগোলের খবর পাওয়া যায়নি। 
এদিকে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিযাপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালীতে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দু’টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের ইমরুল কায়েস চৌধুরীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ধুরুমখালী নাপিত পাড়া কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরীর হাতে প্রহৃত হয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আলমের ভাইপো, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও তাদের সমর্থকরা। এ ঘটনার জের ধরে রুমখাপালং মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরীর কর্মী সমর্থকদের উপর চড়াও হয়। এসময় শাহ আলম সমর্থকদের হামলায় ১০-১২ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে তাজ উদ্দিন, শোয়াইব, রবি ও খাইরুল আমিনের অবস্থা গুরুতর। 
একই ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের নলবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। 
এছাড়া জালিয়াপালংয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার প্রতীকের এজেন্টরা ভোটারদের সীল মারতে না দিয়ে ব্যালট কেড়ে নেয় এবং প্রত্যেকটা বইতে নিজেরাই সীল মেরে দিচ্ছে। আমি এসব দেখেছি। আমি এবিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে মৌখিক অভিযোগ করেছি। আমাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেছে বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আমিন বলেন, আমি ৯টি কেন্দ্রই পরিদর্শন করেছি। শুধু ৩নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেই নৌকার পক্ষে জোর করে সীল মারা হয়েছে। অন্য কেন্দ্রে এমন সমস্যা ছিল না। 
র‌্যাব-১৫ এর কক্সবাজারের কর্মকর্তা মেজর মেহেদী হাসান বলেন, বিচ্ছিন্ন ও ছোটখাট দুই একটি ঘটনা বাদ দিলে ২১টি ইউনিয়নেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও গন্ডগোলের কারণে ২০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোছাইন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ৩টি উপজেলার ২১টি ইউপির ২০১ টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ চলে। তবে গন্ডগোল ও সহিংসতার কারণে খুরুশকুল তেতৈয়ার একটি ও হলদিয়াপালংয়ের একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। 
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, তেতৈয়া দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়া ছাড়া এবার ইউপি নির্বাচনে আর কোনো বড় ধরণের ঘটনা ঘটেনি।
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ