সংঘর্ষের ঘটনায় চমেকের ৩০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার। একই সভায় আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ সময় মেয়েদের ছাত্রাবাস চালু করলেও ছেলেদের ছাত্রাবাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার জানান, ‘কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করাসহ সংঘর্ষে জড়ানোর দায়ে ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে আট জনকে দুই বছর, দুজনকে দেড় বছর ও ২০ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে’। তিনি আরও বলেন, ‘কলেজে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে এসব শিক্ষার্থীরা কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে তাদের এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় আমরা আগামি ২৭ নভেম্বর থেকে কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময় ছাত্রীদের হল খুলে দেওয়া হবে। তবে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ থাকবে। ছেলেদের হলের সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে সিট বরাদ্দ দিয়ে হল খোলা হবে’।
এর আগে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৯ অক্টোবর রাত ১২ টার দিকে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জেরে সকালে আবারও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
বিবদমান দুই গ্রুপের এক পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অপর পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
ঘটনার পর পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই রাতে নওফেলের অনুসারীরা আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওই হামলায় নাছির গ্রুপের ৬১ ব্যাচের মাহফুজুল হক (২৩) ও ৬২ ব্যাচের নাইমুল ইসলাম (২০) আহত হন। রাতের ঘটনার জেরে ৩০ অক্টোবর সকাল ৯টায় শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী মাহাদি জে আকিবকে (২০) একা পেয়ে বেধড়ক পেটায় আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। এরপর দুই পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নওফেলের অনুসারীদের ধাওয়া খেয়ে চমেক প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে পড়ে আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানেই অবরুদ্ধ ছিলেন১ তারা। পরে পুলিশি পাহারায় তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।
এ ঘটনায় ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সন্ধ্যার মধ্যে হোস্টেল ছেড়ে যেতে ছাত্রদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যায় আবাসিক হল ছাড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে, হামলায় আকিব মাথায় মারাত্মক জখম পান। এরপর দীর্ঘ সময় নিয়ে তার মাথার অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। মাথার হাড় খুলে পেটে রেখে চিকিৎসা চালানো হয়। এরপর মাথায় এঁকে দেন বিপদ চিহ্ন। চিকিৎসকরা মাথার ব্যান্ডেজে লিখে দেন, ‘হাড় নেই, হাত দেবেন না’।
অপারেশনের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শক্ত কোনও কিছুর আঘাতে তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ অবস্থায় অপারেশন করে মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটি আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
পরে এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। ২১ দিন পর সোমবার (২২ নভেম্বর) প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। প্রতিবেদনে সংঘর্ষ সংঘটিত হওয়ার দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে এর জন্য দুই পক্ষ দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সংঘর্ষের ঘটনা বন্ধে প্রতিবেদনে কোনো্ সুপারিশ করা হয়নি।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর