কাউন্সিলরের বুকে শেষ গুলিটি করেছে শাহ আলম, মেরেছে লাথি : আহত বাদল

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কুমিল্লার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কুসিকের প্যানেল মেয়র সৈয়দ মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ মো. বাদল।  তিনি সোহেলের সহযোগী।  তারমতে, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে পাঁচ জন।  এরমধ্যে দুজনকে চিনতে পেরেছেন বাদল।  তাদের নাম-পরিচয় পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. বাদল, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।  সোমবার বিকালে নগরীর পাথরিয়াপাড়ার কার্যালয়ে ঢুকে কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগীকে গুলি করা হয়।  রাত সাড়ে ৮ টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল ও হরিপদ মারা যান।
ঘটনার পর কাউন্সিলর কার্যালয়ের সিসিটিভির ফুটেজ এবং একাধিক আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা।  ঘটনার ক্লু উদঘাটনে কাজ করছে তারা।
স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারীদের টার্গেট ছিল কাউন্সিলর সোহেল।  হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় পাঁচ জন।  তাদের মধ্যে দুই জন হতাহতদের পরিচিত।  পাঁচ জনের মুখে মুখোশ, মাথায় হেলমেট ও পরনে কালো পোশাক ছিল।  তারা র‌্যাব পরিচয় দিয়ে গুলি চালায়।  হত্যার পেছনে রয়েছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, মাদক, গোমতী নদীর মাটি ও বালু ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার।
ঘটনার সময় কাউন্সিলর সোহেলের সঙ্গে কার্যালয়ে বসা ছিলেন সহযোগী হরিপদ সাহা, আরেক সহযোগী মো. বাদল এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহেল চৌধুরীসহ ছয় জন।  তারা ছয় জনই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চার জন।
গুলিবিদ্ধ বাদল জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিনের মতো কার্যালয়ে বসে ছিলাম।  বিকালে সোহেল ভাই কার্যালয়ে এলে একসঙ্গে বাইরে ঘোরাফেরা করি।  গতকাল কার্যালয়ে সোহেল ভাই, আমিসহ ছয় জন বসে কথা বলছিলাম।  বাইরে ঘুরতে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি সবাই।  এ সময় পিস্তল হাতে কার্যালয়ে ঢোকে পাঁচ জন।  সবার মুখে মুখোশ, মাথায় হেলমেট এবং পরনে কালো পোশাক ছিল।  র‌্যাব পরিচয় দিয়ে প্রথমে সোহেল ভাইয়ের মাথায় গুলি চালায়।  পরে আমাদের ওপর গুলি চালায়।  সোহেল ভাই মাটিতে পড়ে গেলে তার শরীরে আরও দুটি গুলি চালায়’।
তিনি বলেন, ‘গুলি চালানোর সময় তারা কথা বলেছে।  কণ্ঠ শুনে দুই জনকে চিনতে পেরেছি।  তারা হলো নগরীর নবগ্রামের মৃত জানু মিয়ার ছেলে শাহ আলম ও তার সহযোগী একই এলাকার সোহেল।  শাহ আলমের কণ্ঠ আমার পরিচিত।  সোহেল কথা বলার মাঝে তোতলামি করেছে।  বাকি তিন জনকে চিনতে পারিনি’।
বাদল আরও বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে আমি সোহেল ভাইয়ের পাশে শুয়ে পড়ি।  তখন দেখেছি সোহেলের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বুকে শেষ গুলিটি করেছে শাহ আলম।  সেই সঙ্গে বুকে লাথি মেরেছে।  এরপর মুখের মুখোশ উঁচু করে বলেছে, “এই সোহেল, আমি শাহ আলম; দেখে যা”।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাহ আলম ও তার সহযোগী সোহেল মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত।  কিছু দিন আগে সাব্বির নামে শাহ আলমের এক সহযোগী নগরীর পাথরিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতি করে।  ডাকাতির বিষয়টি পুলিশকে জানান কাউন্সিলর সোহেল।  এ কারণে কাউন্সিলর সোহেলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল শাহ আলম।
পাথরিয়াপাড়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সোমবার বিকালে হঠাৎ কার্যালয় থেকে গুলির শব্দ শোনেন।  বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এলে পাঁচ জনকে দেখতে পান।  এ সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা।  এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
ঘটনার পর থেকে শাহ আলম ও জেল সোহেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি।  তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম বলেন, ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে শাহ আলম ও তার সহযোগী সোহেল জড়িত।  একই সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের সহযোগী বাদলও একই কথা বলেছেন।  হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততা যাচাই করছি আমরা।  সেই সঙ্গে কার্যালয়ে গুলি চালানো, হত্যাকাণ্ডের আলামত ও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  সব তথ্য যাচাই করে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে, কাউন্সিলর সোহেল ও সহযোগীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার রাতে নগরীর ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারীরা পাথরিয়াপাড়া ও সুজানগর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে তারা শতাধিক বাড়িঘর, অফিস ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ সময় আতঙ্কে সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকায় শাহিনুর ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। মারা যাওয়া শাহিনুর কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারী ছিলেন।
শাহিনুরের বড় ছেলে মো. সানজিদ বলেন, রাতে কাউন্সিলর সোহেল মারা যাওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে লাঠিসোঁটা হাতে সুজানগরে হামলা ও ভাঙচুর চালায় একদল দুর্বৃত্ত। সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাট ও অফিস ভাঙচুর করে তারা। হামলার সময় আমার বাবা বাসায় ছিলেন। হামলা-ভাঙচুরের বিকট শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অর্থ) আব্দুর রহমান বলেন, কাউন্সিলর সোহেলসহ দুই জন নিহতের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। অন্যদিকে ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় রাতে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও কেউ অভিযোগ দেয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে পুলিশ।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ