গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত, প্রজ্ঞাপন জারি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে মেয়রের দায়িত্ব পালনের জন্য তিন সদস্যের প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে জাহাঙ্গীর আলমের বরখাস্তের বিষয়টি জানান।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির কারণে এর আগে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করে। গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বহিষ্কারের আগে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দেওয়া হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনককে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে বা তাতে মদত দিলে অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড এবং ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ একাধিকবার করলে সাজা যাবজ্জীবন ও অর্থদণ্ড ৩ (তিন) কোটি টাকা করার বিধানও আছে আইনে।
গোপনে ধারণকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা গেছে। বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
অবশ্য শুরু থেকেই ভিডিওটি বানোয়াট বলে আসছেন জাহাঙ্গীর আলম। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরই গত ৩ অক্টোবর তাকে শোকজ করে আওয়ামী লীগ।
যেসব কারণে দেখিয়ে বরখাস্ত করা হলো মেয়র জাহাঙ্গীরকে
কী কী কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধসংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল–ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণসংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মতামত জানতে চাওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো মতামত দেওয়া হয়নি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধের পরিপন্থী কার্যকলাপ দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল, যা সিটি করপোরেশন আইনানুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ। ইতিমধ্যে এসব অভিযোগ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন অপসারণের কার্যক্রমও শুরু করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
বরখাস্ত হওয়া মেয়রকে আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে নিজ দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। অপর আদেশে তিনজন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি মেয়রের প্যানেলও গঠন করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাঁরা হলেন আসাদুর রহমান কিরণ, মো. আবদুল আলীম মোল্লা ও মোসা. আয়েশা আক্তার। নিয়মানুযায়ী আসাদুর রহমানই হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
এর আগে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কিছু বিতর্কিত মন্তব্যসংবলিত ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আজই মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. আতাউল্লাহ মণ্ডলকে। তিনি মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ