দক্ষিণের পর এবার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে পিষ্ট সাবেক গণমাধ্যমকর্মী, চালাচ্ছিলেন সুইপার

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির সামনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি ময়লার গাড়ির চাপায় এক সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। তার নাম আহসান কবির খান। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর প্রথম আলোর পেস্টিং বিভাগে কাজ করতেন। সাত বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রিন্টিং ব্যবসা করছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ময়লার গাড়ির চাপায় মারা যান তিনি। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বসুন্ধরা সিটির সামনে ডিএনসিসি’র একটি ময়লার গাড়ির চাপায় আহসান কবির মারা যান। তবে তিনি এ সময় মোটরসাইকেলে ছিলেন নাকি সড়ক পার হচ্ছিলেন এই বিষয়ে কেউ তথ্য দিতে পারেনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা গাড়িটি আটক করলেও চালক পালিয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহসান কবির খান একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে সড়ক অতিক্রম করছিলেন। এসময় বেপরোয়া গতির একটি ময়লার গাড়ি কারওয়ান বাজার থেকে পান্থপথের দিকে যাওয়ার সময় তাকে চাপা দেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদ আহসান জানান, দুর্ঘটনার পর সাময়িক সময় ওই সড়কটি স্থানীয় লোকজন অবরোধ করে রেখেছিল। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সড়কে এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
একদিন আগেই, গতকাল (২৪ নভেম্বর) গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির চাপায় নটরডেম কলেজের এক ছাত্র নিহত হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা মতিঝিল থেকে গুলিস্তান এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিল। বৃহস্পতিবারও নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা দিনভর গুলিস্তান ও নগরভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল।
এদিকে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত আহসান কবীর খানের (৪৫) বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এসএম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে’।
সুইপার চালাচ্ছিলেন গাড়িটি
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতো রাজধানীর পান্থপথে দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক কর্মী আহসান কবির খানকে চাপা দেওয়া উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ডাম্প ট্রাকটির চালকও ছিলেন সুইপার। গাড়িটির মূল চালক ছিলেন রুবেল উদ্দিন নামে কর্পোরেশনের এক কর্মী। কিন্তু গাড়িটি চালাতেন ফটিক নামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক সুইপার। তিনি ডিএনসিসির বৈধ কর্মীও নন।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে আহসান কবিরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় ফটিক। উপস্থিত জনতা তাকে ধাওয়া দিলে পান্থপথ সিগন্যালে গিয়ে গাড়িটি রেখে পালিয়ে যায় সে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এসএম শফিকুর রহমান জানান, ‘গাড়িটি যান্ত্রিক বিভাগের। তবে সে আমাদের বৈধ চালক কিনা তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না’।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম জানান, ‘গাড়িটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নয়। এটি যান্ত্রিক বিভাগের। চালকও সেই বিভাগের’।
বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম কল রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিণ সিটির মতো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেও চালকের সংকট রয়েছে। ক্লিনার-পিয়নদের দিয়ে গাড়ি চালানো হয়। রয়েছে বহিরাগত চালকও। বৈধ চালকরা তাদের গাড়ির চাবি অন্যদের দিয়ে দেন। তারা তেল চুরি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে কর্পোরেশনের পরিবহন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত। বৈধ চালক নিয়োগেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কোনো তদারকিও নেই।
এর আগের দিন বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ি। সেই গাড়ির চালকও ছিলেন ক্লিনার। তার নাম রাসেল (২৬)। গাড়িটির মূল চালক ছিলেন হারুন মিয়া। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন।
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের মতো এমন আরও ৫ শতাধিক গাড়িচালক রয়েছে, যারা ক্লিনার ও পিয়ন হিসেবেই নিয়োগপ্রাপ্ত। আর বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা অন্যের বদলি হিসেবে গাড়ির ডিউটি করেন।
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করে আগামি তিন কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএনসিসির সচিব (যুগ্ম-সচিব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এসএম শরিফ-উল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলমকে সদস্য করা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ