ভারতে স্বামী করেন যুবতীদের দিয়ে দেহব্যবসা, বাংলাদেশে স্ত্রী চালান এনজিও

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নিজের প্রকৃত নাম আড়াল করে ভারতে যুবতীদের দিয়ে দেহব্যবসার একটি চক্র গড়ে তোলার অভিযোগে কথিত এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে পুলিশ। ভারত পুলিশের দাবি অনুযায়ী তার প্রকৃত নাম মমিন। কিন্তু ভারতে গিয়ে বিজয় দত্ত (৪০) নাম ধারণ করেন তিনি। কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন শহরে কয়েক হাজার যুবতী সরবরাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগে মমিন, দু’জন নারীসহ অন্য ছয় জনকে ভারতের ইন্দোর পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অনলাইন নিউজ১৮ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মমিনের স্ত্রী বাংলাদেশে একটি এনজিও চালান। তিনিই বিভিন্ন কাজ দেয়ার নাম করে যুবতীদেরকে ভারতে পাঠান তার স্বামীর কাছে।
ওদিকে তার স্বামী মমিন এসব যুবতীকে ব্যবহার করেছেন যৌন ব্যবসায়। গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর বুধবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে সব তথ্য প্রকাশ করেছেন কথিত মমিন।
রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় এক বছর আগে পুলিশ মহালক্ষ্মীনগরে একটি হোটেলে ঘেরাও দেয়। এ সময় তারা ৯ বাংলাদেশী যুবতীসহ ১৩ যুবতীকে উদ্ধার করে। বাংলাদেশি এসব যুবতীকে ভাল বেতনের প্রলোভন দিয়ে ইন্দোরে নেয়া হয়েছিল। এরপর তাদেরকে দেহব্যবসায় নামানো হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। তারা দেখতে পায় এই ব্যবসার সঙ্গে আন্তর্জাতিক যৌনতার চক্র জড়িত। তদন্তের সময় যুবতীরা মমিনের নাম বলে দেন। পুলিশকে তারা বলেন, বিজয় দত্ত ওরফে মমিন তাদেরকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে নিয়ে গিয়েছেন। তারপর বাধ্য করেছেন যৌনতায় লিপ্ত হতে। কিন্তু ওই সময় পুলিশ মমিনকে ধরতে পারেনি। তারা তাকে ধরার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে পুলিশের একটি টিম মুম্বইয়ে চলে যায়। সেখানে একটি এলাকায় মমিন মাঝে মাঝে অবস্থান করেন এবং তার ব্যবসা চালাতে থাকেন। এই অভিযানেই ধরা পড়েন মমিন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ইন্দোর থেকে গ্রেফতার এড়াতে মুম্বইয়ে চলে যান। তাকে নিয়ে তার ব্যবহার করা ১৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করতে পুলিশ চলে যায় ইন্দোরে। এ সময় তার কাছ থেকে কিছু মাদকও উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এতে মমিন স্বীকার করেন যে, তিনি একজন বাংলাদেশি। ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করেন ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে। তিনি বাংলাদেশের অনেক যুবতীকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাপ্লাই দিতে থাকেন। কত মেয়ে সরবরাহ দিয়েছেন এভাবে, এর কোনো হিসাব নেই তার কাছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন এ সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে। ওদিকে তিনি যেসব মেয়েকে ভারতে নিয়ে দেহব্যবসায় নিয়োজিত করতেন, তাদের আশ্রয় চাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। মমিন তাদেরকে মাদক সেবনে বাধ্য করতেন। এসব যুবতীর কাছেও কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মমিন তাদেরকে পুলিশের ভয় দেখাতে থাকেন। বলেন, তারা যদি দেহব্যবসা করতে রাজি না হন বা অন্যের সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে। এসব যুবতীকে বিউটি পার্লারে এবং গৃহকর্মে ভাল বেতনের প্রলোভন দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মমিনের স্ত্রী বাংলাদেশে একটি এনজিও চালান। তিনি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মেয়েদের টার্গেট করেন। তাদেরকে কাজ দিয়ে ভারতে পাঠান। এমনি করেই তাদেরকে দেহব্যবসায় ঠেলে দেয়া হয়। ফোনকলে তারা মেয়েদেরকে গাদি, কাস্টমারকে ভাদা হিসেবে উল্লেখ করতেন।
এসব কর্মকা- চালানো মমিন কখনো ওইসব মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন না। তিনি বিভিন্ন নামে ফোনকলে কথা বলতেন। একটি মোবাইল ফোন নম্বর সর্বোচ্চ তিনদিন ব্যবহার করেন তিনি। পরে ওই যুবতীদের দিয়ে তিনি মাদক ব্যবহসা শুরু করেন। ভারতে তিনি অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। প্রস্তুত করেছেন ভুয়া ডকুমেন্ট, যেমন রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট ও আরও অনেক কিছু। মমিনের নেটওয়ার্কে এজেন্ট আছে ইন্ডোর, ভুপাল, মুম্বই, পুনে, আহমেদাবাদ ও অন্যান্য শহরের।
বাংলাদেশে বেকার ছিলেন মমিন। প্রায় দুই দশক আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেন। তারপর মুম্বই। পরে সেখান থেকেই মেয়েদের দিয়ে দেহব্যবসা পেতে বসেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএকে