ফেনীতে ১০ মাসে ১৪৬ নারী নির্যাতন-ধর্ষণ মামলা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ফেনীর বিভিন্ন থানায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১৪৬টি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ও যৌতুক মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ১ হাজার ৬৮২টি মামলা। আদালতে মামলার স্তূপ থাকায় বিচারকার্য শেষ করতে সময় লাগছে বছরের পর বছর।
সর্বশেষ ফেনীর আদালতে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা ২৭ বছর পর সম্প্রতি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ মামলার বাদী দীর্ঘদিন আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়ে নানাভাবে হয়রানিতে পড়ে বিচারের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় এখন অনেকেই মামলা না করে অভিযুক্তদের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে।
মামলার রায় পর্যন্ত গড়াতে বছরের পর বছর অপেক্ষার ভয়ে অনেকেই মামলা করতে ভয় পান। আবার অনেকে মামলা করে রায় হওয়ার আগেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে পার পেয়ে যায় অপরাধী চক্র। বিচারহীনতায় বেড়ে যায় নির্যাতনের ঘটনা।
ফেনীর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানী বলেন, জেলার ৬ উপজেলায় বিভিন্ন থানায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৬টি নারী নির্যাতন সংশ্লিষ্ট মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ৪৮টি মামলা, যৌতুক ও অপহরণের ঘটনায় আরও ৯৮টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
এসব মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ২১টি ধর্ষণ ও ৪৮টি যৌতুক ও অপহরণ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে। ৭টি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন থানায় পুলিশের হাতে ৭০টি মামলার তদন্ত চলছে।
ফেনী জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ফেনীর বিভিন্ন স্থানে যেসব নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের কাছে এসেছে আমরা প্রতিটি মামলা রেকর্ড করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বাকি তদন্তনাধীন মামলাগুলোর প্রতিবেদন দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য পুলিশের বিভিন্ন সভায় খোঁজ-খবর নিয়ে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ফেনীর নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ফেনীতে নারী শিশু আদালতের বিচারক পদটি শূন্য ছিলো।
এছাড়াও করোনাকালীন নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ফেনীর নারী শিশু আদালতে মামলার স্তুপ পড়ে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক মোহাম্মদ ওসমান হায়দার যোগদান করার পর মামলায় গতি ফিরেছে। করোনা পরবর্তী সময় থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফেনীর নারী শিশু আদালতে নির্যাতনের ১৩৪টি মামলার রায় হয়েছে। একই সময়ে ২১৩টি কমপ্লেইন মামলা ও ৮টি শিশু নির্যাতন মামলা এবং ১টি নারী পাচার মামলাও নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ হাজার ৩২৯টি নারী শিশু নির্যাতন মামলা, ৩৪৭টি শিশু নির্যাতন মামলা ও ৬টি নারী পাচার মামলা বিচারাধীন। বর্তমান বিচারক যোগদানের পর সর্বমোট ৪৬০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুর হোসেন জানান, ফেনীর আদালতে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌতুক ও নারী পাচারের ঘটনায় অন্তত ২ হাজার মামলা বিচারাধীন। কিস্তু এর বিপরীতে বিচারক রয়েছেন মাত্র ১ জন। একজন বিচারকের পক্ষে একসঙ্গে এতগুলো মামলা চালানো অসম্ভব। তিনি বলেন, মামলার পরিমাণ অনুযায়ী ফেনীর আদালতে কমপক্ষে দুই জন নারী শিশু বিচারক থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় মামলার দীর্ঘ সূত্রিতায় বিচারপ্রার্থীরা নানাভাবে হয়রানি হচ্ছেন। বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে অনেক মামলার বাদী আসামির সঙ্গে আপস মীমাংসা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর