নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নোয়াখালীতে ১৩ জনের কারাদণ্ড

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলায় ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।  একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) ১২টা ১ মিনিটে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষণা করেন।  বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের পিপি মামুনুর রশীদ লাভলু।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি নুর হোসেন বাদল, আবদুর রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন মিয়া, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন কন্ট্রাকটর, নুর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ ও দেলোয়ার হোসেন দেলু। লাতক আসামিরা হলেন- আবদুর রব চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, জামাল উদ্দিন ও মিজানুর রহমান তারেক।
অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ বলেন, এ মামলায় মোট ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পিবিআই।  অভিযুক্তদের মধ্যে ৯ আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে।  অপর চারজন পলাতক রয়েছেন।  এ মামলায় বাদীসহ ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২০ সালে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে স্থানীয় সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনী। এতে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে প্রহার করে। সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে জেলা সদরে নিজ বোনের বাসায় পালিয়ে যান আহত ওই নারী।
সেখানে গিয়েও অভিযুক্তরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রস্তাব দেন। গৃহবধূ এতে রাজি না হওয়ায় আগের ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ৪ অক্টোবর সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বেগমগঞ্জ মডেল থানায় ধর্ষণ, নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে তিনটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। তিন মামলার মধ্যে ৪ অক্টোবর ধর্ষণের মামলায় দেলোয়ার ও আবুল কালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
আসামিরা যেন মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকে : নির্যাতিত নারী
আদালতের দেওয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নির্যাতনের শিকার সেই নারী। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমি তাদের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছিলাম। আদালত সেই সাজাই দিয়েছে। এখন আমি চাই আসামিরা যাতে মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আসামিরা বাইর অইতো হাইল্লে আঁর ও আঁর বাল-বাচ্চার ক্ষতি কইরবো’।
এর আগে, দুপুরে এ মামলার রায়ে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন ১৩ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪-১৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত জোর করে ওই নারীর ঘরে ঢোকেন। ঘরে থাকা নারী ও তার স্বামীকে মারধর, নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা এবং পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
ঘটনার ৩২ দিন পর ৪ অক্টোবর অভিযুক্তরা ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ওই দিনই নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ