ফয়’স লেকের ‘মধুকুঞ্জে’ পুলিশের হানা, গ্রেফতার ৮, মানবপাচার আইনে মামলা

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নগরীর খুলশি থানাধীন ফয়’স লেকে দীর্ঘদিন ধরে পতিতা-মাদকের সেবনখানা হিসেবে পরিচিত মোটেল সিক্স স্বর্ণালী ও রূপসী বাংলায় অভিযান চালিয়ে চার নারীসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।  গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালানোর পর আজ রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে খুলশি থানা পুলিশ।
খুলশি থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।  তবে অভিযান চলাকালীন কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে ‘মোটেল সিক্স স্বর্ণালীর কথিত মালিক কক্সবাজার রামু থানাধীন দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাজীর পাড়া ইদ্রিস মাস্টারের বাড়ির মো. ইদ্রিসের ছেলে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি, একাধিক মাদক ও মানবপাচার মামলার আসামি সরোয়ার ওরফে মো. সরোয়ার (৪৮) এবং ওই মোটেলের ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ ওরফে আমান (৫০)।
রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টার দিকে গ্রেফতারকৃতদেরকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, পলাতক থাকা সরোয়ার, আমান উল্লাহ, আটক চার নারীসহ ১০ জনকে আসামি করে রবিবার ভোরে খুলশী থানায় বাদি হয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি (নং-২৩/৪২৮) দায়ের করেন এস আই দোয়েল বড়ুয়া। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘সংঘবদ্ধ গোষ্ঠি কর্তৃক পরস্পরের সহায়তায় মানবপাচার সম্পাদন, পতিতাবৃত্তির জন্য যৌনকর্মী সংগ্রহ, পতিতালয় স্থাপন ও পরিচালনাসহ পতিতাবৃত্তির আহ্বান জানানোর অপরাধ’।
গ্রেফতার ৮ আসামি হলেন মোটেল সিক্স স্বর্ণালীর কর্মচারী আকবরশাহ থানাধীন সিটি গেইট এলাকার মিরপুর আবাসিক এলাকার আবদুল কাদেরের ছেলে মো. রেদোয়ান হোসেন ওরফে রেদোয়ান (২০), আকবরশাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনি বি ব্কল এলাকার মো. সিরাজ ভূঁইয়ার ছেলে মো. রাজু (৩৭), একই থানাধীন নিউ শহীদ লেইন এলাকার মো. হাসান উল্লাহর মেয়ে আঁখি বেগম (২২), রূপসী বাংলা হোটেলের কর্মচারী ভোলার তজুমদ্দিন থানাধীন চাচরা গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে ইয়ানুর বেগম (৪০), ঢাকার বাড্ডা থানাধীন মে’রি টোলা এলাকার অসিত রায়ের মেয়ে জুঁই রায় (২৭), ঢাকার খিলগাঁও থানার সিপাহীবাগ এলাকার নাসির উদ্দিনের মেয়ে কোহিনুর আকতার (২৮), রূপসী বাংলা হোটেলের মালিক মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানাধীন বাহ্মণ চুনগড় গ্রামের জামশেদ আলমের ছেলে মো. নুরুল আবছার (৩৮) এবং একই হোটেলের কর্মচারী জোরারগঞ্জ থানার শান্তিরহাট এলাকার শামসুল হকের ছেলে মো. সেলিম (৪০)।
পুলিশ ও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে খুলশি থানার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও ফ্ল্যাট বাড়িকে ‘পতিতালয়’ বানিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিল একটি চক্র। পাশাপাশি ইয়াবাসহ মাদক বিক্রি ও সেবনের নিরাপদ আস্তানা ছিল এগুলো। এ চক্রে শাওন, মীম, রেখা, আর্ট মামুন, রাসেল, জাভেদ প্রকাশ কোব্বাত, নজরুল, উজ্জল, বাবলু, নাঈম, আপন, রাজু, দেলোয়ার, রাসেল, কালাম, মানিকসহ বেশ কয়েকজন সক্রিয় ছিল। তাদের অনেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তাদের ‘আস্তানাগুলোয় পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও ‘মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’ ও রূপসী বাংলা ছিল সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বখতেয়ার নামে কথিত এক পুলিশ ‘কর্মকর্তার’ সহায়তায় অসামাজিক কার্যকলাপের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন ‘মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’র কথিত মালিক সারোয়ার ও ‘রূপসী বাংলা’র নুরুল আবছার। শনিবার সন্ধ্যার অভিযানে আবসার পুলিশের হাতে আটক হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় সরোয়ার। তাকে এখন পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে বলে জানা গেছে। 
অভিযোগ রয়েছে, খুলশি থানার সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রতিমাসে মোটা অংকের ‘মাসোহারা’ দিয়ে মোটেল সিক্স স্বর্ণালীতে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিলেন সারোয়ার। এর আগে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে খুলশি থানা এলাকায় পুলিশ বিভিন্ন হোটেল/মোটেল/গেস্ট হাউজের নামে ‘পতিতালয়’ পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দিলেও সারোয়ার থেকে যান অধরা। সারোয়ারকে শিগগির গ্রেফতার করা হবে বলে জানান পুলিশ।
এছাড়াও ফয়’স লেকস্থ আকবরশাহ থানাধীন হোটেল রিয়েল পার্ক, একই থানাধীন একেখানের হোটেল হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, খুলশী থানাধীন হোটেল আপন নিবাস, পাহাড়তলী থানাধীন সিলভার প্যালেস হোটেল, সিডিএ মাকের্টের সামনের পার্ক ইনসহ অলংকার ও একেখান সংলগ্ন একাধিক আবাসিক হোটেলে কতিপয় পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম চলছে। পাহাড়তলী থানার কথিত ক্যাশিয়ার মাসুদ প্রকাশ গরু মাসুদ থানার নামে, আকবরশাহ, পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং এলাকায় ডিবি পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ার অলি ডিবি পুলিশের নামে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা এসব পতিতালয় থেকে সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে।  আর খুলশীতে ফয়’স লেক অংশে সেভেন স্টার নামের সাতজনের একটি সিন্ডিকেট পুরো ফয়’স লেকে এসব অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।  তারা সবাই এখন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করছে।  যদিও এক সময় এদের অনেকেই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করতো বলে জানা গেছে।

ডিসি/এসআইকে/আরসি