নৌকার মনোনয়ন দিতে এমপি মোসলেমের নামে ‘১৫ লাখ টাকা’, অভিযোগ তুলে বহিস্কার যুবলীগ নেতা

ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামজুড়ে সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী হাওয়ায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে একটি চেক।  ১৫ লাখ টাকার এই চেক বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  চট্টগ্রাম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (অতিরিক্ত পিপি) ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এই চেকের ছবি দিয়েছেন।  ছবির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে তিনি সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে এই চেকের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা লেনদেন করার অভিযোগ করেছেন।  যদিও যার বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি এ ধরনের লেনদেনের অভিযোগ নাকচ করে কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে কামাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘আমি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট অ্যান্ড অডিশনাল পিপি, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট ও সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগ।  আসন্ন ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেবেন বলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা জনাব আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপির নাম দিয়ে আমার কাছ থেকে পনের লাখ টাকার চেক নিয়েছেন।  কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া তো দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি।  এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই।  অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হবো এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হবো।  পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ’।
মুহূর্তেই এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।  দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।  সেই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন অনেকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির বলেন, ‘আমি বিষয়টি কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি।  যার কাছ থেকে চেক গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে আমার গত পাঁচ বছরে দেখাই হয়নি।  এমনকি মোবাইলে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।  আমি এমনি যুবলীগ নেতা হিসেবে তাকে চিনি।  তাছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা নেই’।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই ইউনিয়নটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিনের এলাকা।  তিনি, উপজেলার সভাপতি এমএ মোতালেব এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচজনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।   কেন্দ্রে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে এমপি মোসলেম এবং আমার তেমন ভূমিকা নেই।   অথচ কামাল উদ্দিন আমাদের নামে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।   আমি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো’।
এ বিষয়ে জানতে এমপি মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।  তবে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল্লাহ আল মামুনকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এমপি মহোদয় তার বোয়ালখালীর বাড়িতে রয়েছেন।  আপনি এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন’।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি দলের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর এবং সুখকর নয়।  বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি।  তবে আমার মনে হচ্ছে চেক গ্রহণের অভিযোগটি সঠিক নয়’।
অভিযোগ তুলে সাময়িক বহিষ্কার কামাল উদ্দিন
এদিকে অভিযোগ তোলার কয়েকঘণ্টার মাথায় সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে কামাল উদ্দিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার রাতেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার আহমদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন বিগত কিছুদিন ধরে ধারাবাহিক ও পরিকল্পিতভাবে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা, অবাস্তব ও আপত্তিকর মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দলের সম্মানহানি করে আসছেন।  উক্ত বিষয়ে তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও তিনি তার কার্যকলাপ অব্যাহত রাখেন।  সম্প্রতি কামাল উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ এমপি ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম হুসেইন কবিরের নাম জড়িয়ে একটি পোস্ট দেন।  ওই পোস্টে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেতে পনের লাখ টাকার লেনদেনের বিষয়ে এক মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর মন্তব্য করে দলের সুনাম ক্ষুন্ন করেন।  এ কারণে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভায় অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিনকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।  পাশাপাশি তাকে স্থায়ী বহিষ্কার ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি বরাবর আবেদন করা হয়’।
কামাল উদ্দিনকে বহিষ্কারের কথা নিশ্চিত করেন সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর