দায়িত্ব ছাড়তেই চাইছেন না কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
পার হয়েছে ষাটের কোঠা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো শিক্ষকের পদে থাকার সুযোগ নেই।  বয়স পূর্ণ হলেই দায়িত্ব হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।  কিন্তু বয়স ৬০ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দায়িত্ব হস্তান্তর না করার অভিযোগ উঠেছে নগরীর কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে।
গত ২৮ ডিসেম্বর এই প্রধান শিক্ষকের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়। নিয়মানুযায়ী ওই সময় সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে তার দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা।  তবে ২১ জানুয়ারি (গতকাল) পর্যন্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি নূর মোহাম্মদ।  বয়স উত্তীর্ণের পরও দায়িত্ব হস্তান্তর না করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর)।  বয়স পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে নীতিমালার কথা উল্লেখ করে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য তাকে চিঠি দিয়েছে মাউশি।
মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাশের স্বাক্ষরে গত ৬ জানুয়ারি এ চিঠি দেয়া হয়।  বয়স ৬০ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় চাকুরিতে বহাল থাকার সুযোগ নেই বিধায় বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিকট বিধি মোতাবেক দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য নূর মোহাম্মদকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চিঠিতে।  চিঠি পাঠানোর তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন মাউশির উপ-পরিচালক দেবব্রত দাশ।
তবে প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ দাবি করেছেন, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি চাইলে প্রধান শিক্ষকের বয়স পূর্ণ হওয়ার পরও চুক্তি ভিত্তিক (অতিরিক্ত সময়ের জন্য) নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ (আবেদন) করতে পারে।  স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি তার চাকরি এক্সটেনশনের জন্য গত ১১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।  তারা ভাবছিলেন ২৮ ডিসেম্বরের আগেই মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।  মূলত এ জন্য দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি।  তবে এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
তবে মন্ত্রণালয়ে চাকির এক্সটেনশনের আবেদন যে কেউ করতে পারে জানিয়ে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাশ আজাদীকে বলেন, এক্সটেনশনের জন্য আবেদন করলেও দায়িত্ব হস্তান্তর না করার সুযোগ নেই।  তাঁর উচিত ছিল নির্ধারিত দিনে (বয়স পূর্ণ হওয়ার দিনে) দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেয়া।  মন্ত্রণালয় যদি তার আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তাকে পুনঃনিয়োগ দেয় বা চাকরি এক্সটেনশন করে তখন তিনি নতুন করে যোগ দেবেন।  এটাই নিয়ম।  আবেদন করেছেন বলে দায়িত্ব হস্তান্তর না করার কোনো রকম সুযোগ নেই।  এটি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পরিপন্থি।  দায়িত্ব হস্তান্তরের পাশাপাশি তার স্বাক্ষরে যাতে কিছু না হয় ব্যাংকসহ সব জায়গায় আমরা চিঠি দিয়েছি।
এদিকে, মাউশির চিঠির পরও দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় স্কুলের ১৯ জন শিক্ষক নূর মোহাম্মদকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।  অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমের মাধ্যমে গত ১৬ জানুয়ারি এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মাউশির চিঠির পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে নূর মোহাম্মদ বলেন, চিঠি পেয়ে আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহোদয়কে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বলি।  তিনি হিসাব-নিকাশ আপ টু ডেট করার কথা বলেছেন।  ইন্টারনাল অডিট ও বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ বাকি ছিল।  বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ইন্টারনাল অডিট সম্পন্ন হয়েছে।  বাকি হিসাব-নিকাশ শেষ করতে হয়তো দুয়েকদিন লাগতে পারে।  এরপরই আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করে দিবো।  এখন দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান নূর মোহাম্মদ।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪০০ জন।  শিক্ষক আছেন ৩১ জন।  এর মধ্যে স্থায়ী ১৬ জন।  আর ১৫ জন অস্থায়ী।  দায়িত্ব না ছাড়ায় এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারী মিলে ১৯ জন প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র, পুরাতন ও নতুন কমিটির একাধিক সদস্য, একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা এবং অভিভাবকসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘসময় ধরে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে দুর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে।  এসব বিষয় সম্পর্কে অবগত বর্তমান কমিটিও।  কিন্তু বিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে এসব সামনে আনা হচ্ছে না।
তবে আরেকটি পক্ষ দাবি করছে, প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ গত অ্যাডহক কমিটি এবং আগের কমিটির সময়ে ব্যাপকভাবে দুর্ণীতিতে জড়ান।  স্থানীয় জনপ্রতিনিধির গোচরে তিনি রাজনৈতিক দালালও বনেছেন।  সময়ের বিবর্তনে তিনি খোলস পাল্টে গ্রুপ পাল্টে দুর্ণীতি করেছেন কোটি কোটি টাকা।  তার বিষয়ে অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলেও সূত্রটি দাবি করেছে।

ডিসি/এসআইকে/আরসি