প্রার্থীদের সমর্থকরাই সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা চালিয়েছে : র‌্যাব

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনি সহিংসতায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।  তারা দুজন প্রার্থীর অনুসারী হয়ে কাজ করেছে।  র‌্যাব বলেছে, সমর্থকরা নিজেরাই উত্তেজিত হয়ে এই সহিংসতা করেছে।  নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে।  প্রার্থীরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছে কিনা তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
সহিংসতা হওয়া সাতকানিয়ার ছয়টি ইউপির মধ্য চারটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয় লাভ করেছে।  দুটির ফল স্থগিত রয়েছে।  মূলত আওয়ামী লীগ ও এর বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনুসারীদের মধ্যে এই সহিংসতা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।  তিনি জানান, সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বান্দরবান ও চট্টগ্রামে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদ ৮ জনকে র‌্যাব ২, র‌্যাব ৭ ও র‌্যাব ১৫ এর অভিযানে ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।  তাদের মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বান্দরবানে সহিংসতায় জড়িত নাসির উদ্দির (৩১), মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭), ইসমাইলকে চট্টগ্রাম থেকে চারটি বন্দুকসহ গ্রেফতার করা হয়।  একই রাতে র‌্যাব ২ চট্টগ্রামে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত জসিম (২৪), মিন্টু (২৬) এবং ঢাকা থেকে কায়েস (২২) ও নুরুল আবছারকে (৩৩) গ্রেফতার করে।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘সন্ত্রাসী এই গ্রুপটির নেতা কায়েস।  সাতকানিয়াতে তার আধিপত্য বিস্তার করতে কায়েস একটি গ্রুপ লালনপালন করতো।  নির্বাচনের দিন কায়েস হামলায় নেতৃত্ব দেয়।  আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রগুলো কায়েস বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে’।
তিনি জানান, কায়েস চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো।  নির্বাচনে সহিংসতা করার পর সে ঢাকায় পালিয়ে আসে।  সহিংসতার পর নাছির উদ্দিন চট্টগ্রামের একটি জঙ্গলে পালিয়ে ছিল।  সে একসময় শাহাবগে ফুল বিক্রি করতো।  নূরুল আবছার ইউপি নির্বাচনে কায়েসের কথায় সাতকানিয়া যায়।  সে ঢাকায় থাকতো।  গ্রেফতার জসিম একজন রাজমিস্ত্রী।  সে গোলাবারুদ নিয়ে মোরশেদের পাশে ছিল।  গ্রেফতার মিন্টু মাইক্রোবাস চালক।  সে অর্ধশত সন্ত্রাসী নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়।
এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার কোরবান আলী একজন নিরাপত্তাকর্মী।  তার বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।  গ্রেফতার অপর ব্যক্তি ইসমাইল সহিংসতায় লাঠিসোটা নিয়ে অংশ নিয়েছিল।  গ্রেফতার কায়েস ও নাসির এই হামলায় যৌথভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে।  কায়েসের সংগ্রহ করা অস্ত্র নাসিরের কাছে রাখতো।
৭ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতেই এই হামলা হয়।  খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সব সময় প্রার্থী বলে না, সমর্থকরাও অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে যায়।  তারা তাদের প্রার্থীদের জয়ী করতে সহিংসতা করে’।  প্রার্থীরা সহিংসতার নির্দেশনা দিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা অনেক সময় টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে।  তারা বিভিন্ন জনের জয়ে কাজ করে।  তবে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের নির্দেশনার বিষয়টি আমরা এখনও পাইনি’।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও বান্দরবান এলাকা থেকে আমরা ইতোপূর্বে ১৭৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছি।  এই অভিযান চলমান’।  পাশের দেশ থেকে অস্ত্র আসে, কিছু কিছু অস্ত্র দেশে বানানো হয়ে বলেও জানায় র‌্যাব।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাতাকনিয়া উপজেলার খাগরিয়া, বাজালিয়া, নলুয়া, সোনাকানিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।  প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয় বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা।  বাজালিয়া ইউনিয়নে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে গিয়ে গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বহিরাগত এক ব্যক্তি।  নলুয়ায় এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খাগরিয়া ইউনিয়নে দু’টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।  এসব সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২১টি মামলা হয়েছে।  গ্রেফতার হয়েছে অর্ধশত।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর