খুলশীতে বেপোরোয়া ওয়াসিম অনুসারিদের কোপে এবার পুলিশ আহত, গ্রেফতার ৪

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন চসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারিদের হামলায় এবার পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে থানার ঝাউতলা রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খাজা এনাম এলাহী ছাড়াও আরও একজন আহত হন।  ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।  ৪ জনই কাউন্সিলর ওয়াসিমের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের অনুসারীরা নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য ঝাউতলা বাজারে জড়ো হতে থাকেন।  এসময় বর্তমান কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা তাদের জড়ো হওয়ার সংবাদে সেখানে হামলা করে।  এতে মোহাম্মদ রাশেদ (২৬) নামে এক যুবক ছুরিকাহত হয়।  এরপর উভয় গ্রুপে সংঘর্ষ বাধে।  এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষ থামাতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।  এসময় পুলিশের ওপর চড়াও হয় দুষ্কৃতকারীরা।  তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসআই এনাম এলাহীর উপর হামলা চালায়।  এতে চাইনিজ কুড়ালের কোপে আহত হন পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এনাম এলাহী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, গত শুক্রবারও দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।  ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়।  এক সপ্তাহ পর আবার তারা সংঘর্ষে জড়ালো।  এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত।  এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  এছাড়া ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতেই আহত এসআই খাজা এনাম এলাহী বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  এই মামলায় আসামি করা হয় দুই পক্ষের ২৫ জনকে।  এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকেও আসামি করা হয়।  তবে এই মামলায় বর্তমান ও সাবেক দুই কাউন্সিলর ওয়াসিম ও হিরণকে আসামি করা হয়নি বলে জানিয়েছে খুলশী থানার একাধিক সূত্র।
জানা গেছে, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চিহ্নিত অপরাধীরা ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারে নেমে পড়ে।  গত এক বছরে জোর করে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে।  একাধিক এই ধরণের আধিপত্য বিস্তারমূলক ঘটনার জেরে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযোগ, জিডি ও মামলা হয় একাধিক।  প্রত্যেকটি মামলায়, অভিযোগে এবং সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) সরেজমিনে প্রমাণ সাপেক্ষে আসামি হয় কাউন্সিলর ওয়াসিমের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসীরা।  কিছু অভিযোগ, জিডিতে ওয়াসিমকেও অভিযুক্ত করা হয়।  প্রথমদিকের একটি সংঘর্ষের মামলায় আসামিও হন কাউন্সিলর ওয়াসিম।  নানান কারণে প্রশ্নবিদ্ধ ও চিহ্নিত ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী কাউন্সিলর হওয়ার পর ওয়ার্ডে নিজের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় আছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।  তার নির্দেশে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা এবং নানান অপরাধে যুক্ত সন্ত্রাসীরা আবারও এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, পতিতা ও মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধে সরব হয়েছে বলে অভিযোগ সাবেক কাউন্সিলর হিরণের অনুসারী ও ওয়ার্ড-থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।  তার বিরুদ্ধে খোদ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণসহ অধিকাংশ নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয়, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একাধিকবার।  এছাড়াও কাউন্সিলর ওয়াসিমের বিরুদ্ধে দখল-হুমকির অভিযোগ এনে পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরেও লিখিত অভিযোগ দেয়ার ঘটনাও আছে। 

সর্বশেষ ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের অনুসারীরা শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঝাউতলা বাজারে জড়ো হতে থাকে।  জড়ো হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে বর্তমান কাউন্সিলর ওয়াসিমের অনুসারী-সমর্থকেরা উপস্থিত হয় এবং দুই গ্রুপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ বাধে।  এতে ওয়াসিমের অনুসারী মোহাম্মদ রাশেদ নামের এক যুবক ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন।  এ ঘটনার পরপরই ওয়াসিমের অনুসারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে জনবল বাড়ায়।  ফলে দুই পক্ষের মধ্যে এ সময় তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষই দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করে।  পুলিশ গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করতে গেলে হামলার শিকার হন পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খাজা এনাম এলাহী।
জানা গেছে, ঝাউতলা এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়ে পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খাজা এনাম এলাহীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।  এ সময় দুই পক্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষ ও ভাঙচুর থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ।  এ সময় হঠাৎ চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এসআই এনামকে কোপ দেয় অজ্ঞাতনামা এক দুর্বৃত্ত।  তার সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন।  এ সময় আত্মরক্ষার্থে হাত দিয়ে চাইনিজ কুড়ালের আঘাত সামলাতে গিয়ে কুড়ালের হাতলে লেগে গুরুতর আহত হন এসআই খাজা এনাম।
পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪ জনকে আটক করে নিয়ে আসে। তারা সকলেই কাউন্সিলর ওয়াসিমের অনুসারী বলে জানা গেছে।  তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতেই এসআই খাজা এনাম এলাহী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করে।  তবে এই মামলায় আসামি করা হয় দুই পক্ষের আরও ২৫ জনকে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে ভাঙচুর করছিল।  পুলিশ ঘটনাস্থলে তাদের নিবৃত্ত করতে যায়।  এ সময় তারা এসআই এনামকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়।  কিন্তু আত্মরক্ষার্থে হাত দিয়ে তিনি ঠেকাতে সক্ষম হওয়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান। তবে তার বাম হাতে জখম হয়েছে।  এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।  সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলায় যারা জড়িত, সবাইকে গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর