আসছে পবিত্র মাহে রমজান, কোনো তৎপরতা নেই চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আর এক মাস পরেই শুরু হবে মুসলমানদের সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান।  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মাসটিকে ঘিরে প্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যাপক ছাড় দেয়া ছাড়াও ভেজালহীন পণ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ীরা নেন নানান উদ্যোগ।  কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রবণতা নেই বললেই চলে।  বরং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিংবা নানান প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে থাকে এখানকার ব্যবসায়ীরা।  এই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রশাসনিক নানান উদ্যোগ দেখা গেলেও সংশ্লিষ্ট কাজটি যাদের দায়িত্বে তারাই এখনো কোনো তৎপরতাই শুরু করেনি।
বিশেষত খোলাবাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে পণ্যের মান যাচাই করার কথা মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের।  কিন্তু খোলাবাজারের দিকে কোনো নজর নেই সংস্থাটির।  ফলে মানহীন পণ্যে বাজার সয়লাব হতে শুরু করেছে।  বাজারে তদারকির চেয়ে অফিসে বসে কাজ করতেই দেখা গেছে বিএসটিআই কর্তাদের।  আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকটি সিন্ডিকেট পণ্য নিয়ে ভাওতাবাজি করে সাধারণ মানুষদের ঠকানোর কাজে সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পণ্যের মানের সঠিকতা যাচাই করার জন্য প্রতিমাসে নিয়মিত খোলা বাজার থেকে পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করার কথা বিএসটিআইয়ের।  নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে এ কাজটি করার কথা থাকলেও বিএসটিআই খোলা বাজারে কার্যত কোনো নজর দিচ্ছে না।  প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, সেসব পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে থাকে তারা।  এবার রমজানে চাহিদা আছে এমন পণ্যের প্রতিও নজর দিচ্ছে না সংস্থাটি।  মাহে রমজানের আগেই বেশি চাহিদা থাকা পণ্যের নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করেছে কিনা সেটা জানাতে পারেনি চট্টগ্রাম বিএসটিআই।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বিএসটিআই যে সকল পণ্যের মান সনদ দিয়েছে, পণ্যগুলো মানসম্পন্নভাবে উৎপাদন হচ্ছে কিনা সেটাও তাদের তদারকি করার কথা।  এজন্য খোলাবাজার থেকে পণ্যগুলো সংগ্রহ করে মান যাচাই করবে।  তারা লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে খোলা বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে না।  অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর সাথে বিএসটিআইয়ের কতিপয় কর্তাদের গোপন আঁতাত থাকে।  যার কারণে বিএসটিআই কর্মকর্তারা ইচ্ছে করেই দেরিতে নমুনা সংগ্রহ করে।  গোপন আঁতাতের কারণে পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ আসলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করতেই রমজানের ব্যবসা শেষ করে নেয় এসব প্রতিষ্ঠান।  দেরিতে পরীক্ষার ফলে মানহীন পণ্য ভোগ করেন রোজদাররা।  বিএসটিআইয়ে এই সংস্কৃতি চলে আসছে বহুদিন ধরেই।
বছরের অন্তত দুইবার পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করার কথা বিএসটিআইয়ের।  পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা সে পরীক্ষার জন্য খোলা বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করবেন তারা।  প্রতিষ্ঠানের অজান্তেই সেই পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে মান যাচাই করবে বিএসটিআই।  পণ্যের কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে সংস্থাটি।  নিয়মিত এ কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।  সংস্থাটি প্রতিবছর রমজান মাসকে সামনে রেখে বিশেষভাবে রমজানে ব্যবহৃত কিছু পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে।  গোপন তৎপরতার মাধ্যমে বাজার থেকে ইফতার ও সেহেরির জন্য ব্যবহৃত হয়- এমন পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।  এরপর এসব পণ্য বিএসটিআই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।  পরীক্ষায় যদি পণ্যের মান নিয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো হয়।  এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে বিএসটিআই।  মাহে রমজান কেন্দ্রিক তৎপরতায় বিএসটিআই সংগ্রহকৃত নমুনার মধ্যে সয়াবিন তেল, লাচ্ছা সেমাই, ঘি, নুডলস, গুড়ো মসলা, দই, আটা, ময়দা, সুজি ইত্যাদির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।  আবার এসব পণ্যের মধ্যে কিছু পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল অল্প দিনে পেলেও কিছু ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে।
খোলাবাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএসটিআই চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সষী কান্তি দাশও।  তবে এই বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, খোলা বাজার থেকে পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ।  পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে আমরা নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছি।  এটা চলমান আছে।  সংগৃহিত নমুনাগুলোর কিছু চট্টগ্রামে, কিছু ঢাকায় পরীক্ষা হবে।  তবে সংগৃহিত পণ্যের পরিমাণ বা তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।

ডিসি/এসআইকে/সিসি