মিতু খুনে ঘুরেফিরে সেই গায়ত্রীই!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রামে সংঘটিত আলোচিত হত্যাকাণ্ড বরখাস্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে ঘুরেফিরে সেই ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর নামই আসছে বার বার।  ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের পরকীয়ার কারণেই চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা মিতুকে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করা হয়- এখনও জোর দিয়ে সেকথাই বলছেন নিহত মিতুর পরিবার।  তবে গায়ত্রীকে আসামি করা তো দূরের, তার অবস্থানই শনাক্ত করা যাচ্ছে না।  কয়েক বছর আগে সর্বশেষ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসে এই ভারতীয় এনজিও কর্মকর্তার অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও এরপর তিনি এখন কোথায় আছেন- সেটা কেউ বলতে পারছেন না।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল রাজধানীর বনশ্রীতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার স্ত্রী মাহমুদা মিতুর বাবা ও মা দুজনেই জোর দিয়ে বলেছেন, কক্সবাজারের একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরেই স্ত্রীকে খুন করান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার নিজেই।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা সাহেদা মোশাররফ ছাড়াও বোন শায়লা মোশাররফ নিনজাও পিবিআই টিমকে জানিয়েছেন, গায়ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর বাবুল আকতার প্রায়ই মিতুকে নির্যাতন করতেন।  এ নিয়ে হয়েছে পরিবারিক সালিশও।  মিতুও তার বাবা-মা-বোনকে প্রায়ই গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের কথা জানাতেন।
গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যাকাণ্ডে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক ও জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমর সিংয়ের নাম আসার পর তার সম্পর্কে জানতে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) চিঠি দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  এর দুই মাস পর সেই চিঠির উত্তর পেলেও ইউএনএইচসিআর ঠিক কী তথ্য দিয়েছে সেটা স্পষ্ট করেনি পিবিআই।
তবে ইউএনএইচসিআর এটি নিশ্চিত করেছে যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার (প্রটেকশন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন গায়ত্রী অমর সিং।  ফিরতি চিঠিতে সংস্থাটি এও জানিয়েছে, গায়ত্রী এখন আর ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে যুক্ত নেই।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর আগে জানা গিয়েছিল, গায়ত্রী অমর সিং সর্বশেষ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে ছিলেন।  সেখানেও তিনি ইউএনএইচসিআর-এর লিগ্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বাবুল আক্তারের সাথে ২০১৩ সালে পরিচয় হয় সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমরসিংয়ের।  একসময় সেই গায়ত্রীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার।  সেই খবর পৌঁছে যায় স্ত্রী মিতুর কানেও।  শুরু হয় অশান্তির ঢেউ।  এই প্রণয়ের জের ধরেই প্রাণ যায় বাবুলপত্নী মিতুর।  ইতি ঘটে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের বর্ণিল ক্যারিয়ারেরও।
কে এই গায়ত্রী?
মিতু হত্যার ঘটনায় মিতুর পিতা মোশাররফ হোসেনের করা এক মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালে প্রথমবার গায়ত্রীর সাথে বাবুলের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন স্ত্রী মাহমুদা মিতু।  ওই সময় বাবুল আক্তার তার মোবাইলের সিমটি দেশে রেখে যান।  আর বিভিন্ন সময়ে গায়ত্রী মোট ২৯টি এসএমএস পাঠান বাবুল আক্তারের সিমে।  পরে প্রতিটি এসএমএসই হাতে লিখে নোট করে রাখেন মিতু।
এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার দেওয়া দুটি বই ‘TALIBAN’ ও ‘Best kept secret’ নামে দুটো বইও হাতে আসে মিতুর।  যার মধ্যে ‘TALIBAN’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পাতায় বাবুল আক্তার নিজ হাতে গায়ত্রীর সাথে পরিচয় ও সম্পর্কের নানা খুঁটিনাটি তথ্য নোট করে রাখেন।  সেই নোট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গায়ত্রীর সাথে প্রথম দেখা হয় বাবুলের।  একে অপরকে প্রথমবার চুমো খান ৫ অক্টোবর।  এর দুদিন পর ৭ অক্টোবর দুজনের মধ্যে প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়।  দুজনে প্রথমবারের মত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটেন ৮ অক্টোবর।  এসব তথ্যের সাথে ১০ অক্টোবর গায়ত্রীর জন্মদিনের তথ্যও ওই পাতায় নোট করে রাখেন বাবুল আক্তার।
গত ১২ মে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, মিতুকে হত্যার আগে গায়ত্রীর মুঠোফোন থেকে মিতুকে এসএমএস করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ডিসি/এসআইকে/আরসি