দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হয়নি এখনো

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
মরদেহ উদ্ধারের পর কয়েকদিন গত হলেও পুলিশ বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (ক.) এতিমখানা ও হেফজখানার শিক্ষার্থী ইফতেখার মালিকুল মাশফি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।  একইভাবে নগরীর পাঁচলাইশের মুরাদপুর পিলখানা এলাকার আলী বিন আবু তালিব মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আরমান হোসেন (১৪) এর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা হলেও পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত মৃত্যু রহস্যের কোনো কিনারা করতে পারেনি।  তবে পুলিশের দাবি, তাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল জানান, যেহেতু হেফজখানার ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সেহেতু সে যে খুনের শিকার হয়েছে- এ ব্যাপারে আপাত দৃষ্টিতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।  এখন আমরা তদন্ত কার্যক্রমে কেন এবং কী কারণে কারা তাকে খুন করেছে, সেটা খুঁজে বের করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  ইতোমধ্যে ওই মামলায় হেফজখানার তিন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  এর মধ্যে একজনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  আশা করছি, দ্রুতই আমরা হত্যারহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবো।
অন্যদিকে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাদিকুর রহমান বলেন, মুরাদপুর পিলখানা এলাকার আলী বিন আবু তালিব মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আরমান হোসেন (১৪) এর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  তাতে নিশ্চিত হওয়া যাবে আরমানের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে।  আমরা সেটার অপেক্ষায় আছি।  পাশাপাশি মামলা হওয়ার পর আমরা বিধি মোতাবেক নিজস্ব সূত্রেও তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।
গত ৮ মার্চ মাদ্রাসা কম্পাউন্ড থেকে আরমান হোসেনের মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বলেছিল, ওইদিন সকাল সাড়ে ন’টায় খবর পেয়ে মাদ্রাসার ভেতর থেকে শিশু শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  তার হাত-পা ভাঙা ছিল।  সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ওই শিক্ষার্থীকে সকালে সিঁড়ির ওপরের দিকে উঠতে দেখা গেছে।  এ কারণে মাদ্রাসার ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
তবে আরমানের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে তার পরিবারের লোকজন হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছে।  আরমান পাঁচলাইশের মুরাদপুরের মির্জারপুল এলাকার আব্দুল হামিদ সড়কের সর্দার বাড়ির আব্বাস উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনার চারদিন আগে গত ৪ মার্চ জেলার বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (ক.) এতিমখানা ও হেফজখানার শিক্ষার্থী ইফতেখার মালিকুল মাশফির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।  ওই হত্যাকাণ্ডকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে যৌন নিপীড়নের জের বলে সন্দেহের তালিকার শীর্ষে রেখেছে।  এ ঘটনায় মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের পর একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি এবং ইতোপূর্বেও সংঘটিত কয়েকটি ঘটনার কারণে মাদ্রাসা সম্পর্কে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট মহলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অন্যরকম ভীতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।  মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/সিসি