বাবুল-মিতুর দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

আদালত প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  মামলার শুনানি শেষে বুধবার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান এ আদেশ দেন।  বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাবুলের দুই শিশুসন্তানকে ১৫ দিনের মধ্যে পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।  দুই শিশু বর্তমানে দাদা আবদুল ওয়াদুদ ও বাবুলের বর্তমান স্ত্রী ইশমত জাহানের তত্ত্বাবধানে মাগুরার বাসায় আছে।
তবে পিবিআই কার্যালয়ে কথা বলার আদেশ বাতিল চেয়ে একই আদালতে আবেদন করেন বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান।  ওই আদেশ বাতিল না করে মহানগর দায়রা জজ বলেছেন, আবেদনটি নামঞ্জুরক্রমে শিশু আইন ২০১৩–এর ৫৩ ও ৫৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে অনুসরণপূর্বক দুই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হলো।
আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাবুল-মিতুর দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।  জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে শিশু আইন বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন বিচারক’।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।  খুনিরা গুলি করার পাশাপাশি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে।  ঘটনার সময় বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন।  হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।  ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।  এ ঘটনায় ১২ মে ৫৭৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করে, মিতু হত্যা ছিল কন্ট্রাক্ট কিলিং।  বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটি সংঘটিত হয়।  মিতুকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।  এরপর একই দিন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।  গত ১০ মে মামলার বাদী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে ডেকে আনা হয় বাবুলকে।  জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাবুলের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই।  শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।  রিমান্ড শেষে বর্তমানে বাবুল আক্তার কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের ১২ মে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।  সেই সঙ্গে মিতুর সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়।  কারণ মৃত্যুর ঘটনাটি ছেলের সামনেই ঘটেছিল বলে জানায় পিবিআই।  তাই এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে মাহি এবং মেয়ে আক্তার তাবাসসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেছিল তদন্তকারী সংস্থা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর নির্দেশনা মেনে মিতু-বাবুল দম্পতির দুই শিশুসন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’।
অপরদিকে, বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী।  গত বছরের ৩ নভেম্বর আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে বাবুল আক্তারের করা মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।  গত ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।
এর আগে পিবিআইয়ের করা আবেদনে ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের নিজের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দেন আদালত।  পরবর্তী সময়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন মোশাররফ হোসেন।  ৬ মার্চ আদালত শুনানি শেষে মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর