যেভাবে ‘নাপা সিরাপ’ নাটক সাজান সেই মা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রেমে জড়িয়ে প্রেমিকের সঙ্গে মুক্ত আকাশে উড়তে চেয়েছিলেন লিমা।  কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অবুঝ দুই শিশু।  পথের কাঁটা সরাতে শুরু করেন পরিকল্পনা।  নেন প্রেমিকের সহায়তাও।  পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষ মাখানো মিষ্টি নিয়ে আসেন প্রেমিক।  আর সেই মিষ্টি খাওয়ানো হয় নাড়িছেঁড়া আদরের দুই সন্তানকে।  মায়ের হাতের মিষ্টি খেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে শিশু দুটি।  ধীরে ধীরে হয় লাশ।  তবে দুই সন্তান হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ মৃত্যু হয়ে বলে নাটক সাজান পাষণ্ড মা।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত লিমাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।  বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান।  তিনি জানান, শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।  এরপরও তিনি সিলেটে ইটভাটায় কাজ করেন।  সেখানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় শুধু স্লিপ বিতরণ করেন।  ১২ বছর আগে তিনি লিমা বেগমকে বিয়ে করেন।  সাংসারিক অসচ্ছলতার কারণে চাতালকলে কাজ করতেন লিমা।  সেখানেই সর্দার সফিউল্লার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।
লিমাকে কাছে পেতে চেয়েছিলেন প্রেমিক সফিউল্লাহ। তবে জুড়িয়ে দেন শর্ত।  দুই সন্তানকে ছেড়ে এলেই কেবল লিমাকে বিয়ে করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  তবে সন্তানদের কী করবেন- এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন লিমা।  এরপর ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকেলে লিমাকে পাঁচটি মিষ্টি দিয়ে আসেন সফিউল্লাহ।  এ মিষ্টি দুই শিশুকে খাওয়ানোর পর আর কিছু করতে হবে না বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান আরো জানান, প্রেমিকের আনা সেই মিষ্টি দুই সন্তানকে খাওয়ান লিমা।  এদিন তার সঙ্গে সফিউল্লাহর প্রায় ১৫ বার মোবাইলে কথা হয়।  আগে থেকেই শিশু দুটির শরীরে জ্বর ছিল।  তাই লিমা নাটক সাজাতে শাশুড়িকে দিয়ে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনান।  পরে দুই শিশুকে এক চামচ করে খাওয়ান।  হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দুই শিশুই মারা যায়।  মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নাপা সিরাপের রিঅ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করেন।  কিন্তু লিমার আচরণে প্রথমেই পুলিশের সন্দেহ হয়।  পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত করতে থাকে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা।  জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন লিমা।  এ ঘটনায় বুধবার বাদী হয়ে সফিউল্লাহ ও লিমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন দুই শিশুর বাবা ইসমাঈল হোসেন।  তবে সফিউল্লাহ এখনো পলাতক।  তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিনের মৃত্যু হয়।  তারা দুজনই জ্বরে আক্রান্ত ছিল।  সে জন্য তাদের নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল।  পরে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ