খুলশীতে রেলওয়ের বাংলোতে অবৈধ গরুর খামার!

মো. শফিকুল ইসলাম খান, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানার একজন ফোরম্যান।  খুব জোর তদবির চালিয়ে তিনি রেলওয়ে পাহাড়তলীস্থ সেগুন বাগান এলাকায় একটি বাংলো বরাদ্দ পান নিজের পরিবার নিয়ে থাকার জন্য। ব রাদ্দ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এই ফোরম্যান অবৈধভাবে ১০ লক্ষ টাকায় সেই বাংলোর বড় একটি অংশজুড়ে গরুর খামার করার জন্য জায়গা ভাড়া দেন।  মাসে ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে সেই জায়গায় গরুর খামার গড়ে তুলতে স্থাপনা তৈরির কাজও প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ।
দৈনিক চট্টগ্রামের কাছে এমন একটি তথ্য আসার প্রেক্ষাপটে দ্রুততার সাথেই সরেজমিনে গোপনে পরিদর্শন করে পাওয়া যায় সেই ঘটনার সত্যতা।  রেলওয়ে থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত কোনো স্থাপনা নিজের থাকা ছাড়া উপভাড়া কিংবা ভাড়া, কিংবা বিক্রি কিংবা আংশিক হস্তান্তর- কোনোটিই বৈধ নয়।  এতোদিন সংবাদমাধ্যমে খবর আসতো রাজনৈতিক নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধিরা রেলওয়ের জায়গা কেনা-বেচায় জড়িত।  কিন্তু এই বিশাল কেনা-বেচায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে না সচরাচর।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় সেগুন বাগান এলাকায় এফ/৩ নম্বরের বিশাল জায়গাজুড়ে অবস্থিত বাংলো বরাদ্দ পান পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ফোরমান জিল্লুর রহমান।  বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি সেই বাংলোর প্রায় বড় একটি অংশজুড়ে গরুর খামার করার জন্য স্থানীয় কাউছার নামের একজনকে ভাড়া দেন।  এর জন্য তিনি অগ্রিম হিসেবে নেন ১০ লাখ টাকা।  প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার শর্তে দেয়া জায়গাটিতে ব্যাপকভাবে গুরুর খামার গড়ে তোলার জন্য স্থাপনাও নির্মাণ শেষ করে আনেন ওই ব্যক্তি।  ঘটনাটি দৈনিক চট্টগ্রাম জানার পর সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের স্টেট শাখার রক্ষণাবেক্ষণকারী (আইডাব্লিউ) আমির হোসেন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, বরাদ্দকৃত বাংলোতে কোনোভাবেই বিদ্যমান স্থাপনার বাইরে আর কোনো স্থাপনা করার বৈধতা নেই।  এছাড়াও বরাদ্দ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সেটির কোনো অংশ ভাড়া/উপভাড়া কিংবা হস্তান্তর বা এই ধরণের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।  বিষয়টি আমি জেনে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এই বিষয়ে বাংলো বরাদ্দ পাওয়া জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের স্টেট অফিসার (ডিইও) মাহবুব-উল করিম এবং ডিইএন রফিকুল ইসলাম এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত।  তবে এর সত্যতা জানতে দু’জনকে ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন না ধরায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক চট্টগ্রামের কাছে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই ধরণের কোনো সুযোগ নেই।  আমি এখনই খোঁজ-খবর নিচ্ছি।  যদি এরকম কিছু হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।  আপনি আমাদের ডিআরএম সাহেবের সাথে একটু কথা বলেন।  আমিও এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিআরএম আবুল কালাম আজাদকে ফোন করা হলে তিনি দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমি এর আগে কিছুটা শুনেছি।  তবে আপনার কাছেই বিস্তারিত জানলাম।  সম্ভবত আপনি জিএম সাহেবকে ফোন করেছেন।  তিনি এবং ডিইএন সাহেব আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।  আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কালকে পরিদর্শন করবো।  রবিবার ওই বাংলোর বরাদ্দ বাতিল করবো এবং যে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে তা উচ্ছেদ করবো।  এই ধরণের কোনো সুযোগ নেই।  যিনি কাজটি করেছেন তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবো বিস্তারিত জানার পর।

ডিসি/এসআইকে