পটিয়া বোয়ালখালী চন্দনাইশ রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ে নিস্ফল যৌথ অভিযান

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের তিনটি পাহাড়বেষ্টিত উপজেলা পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে সশন্ত্র তান্ডব চালানো ৩ সন্ত্রাসি গ্রুপের খোঁজে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে র‌্যাব ও পুলিশ উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার হয়ে গহীন পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করে।  একই সময়ে পটিয়া সীমান্তের পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানের সেনা বাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের একটি টিম অভিযান চালায়।  কিন্তু সন্ত্রাসি গ্রুপগুলোকে খুঁজে পায়নি।
অভিযানে বান্দরবান সীমান্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের মেজর মোহাম্মদ তাহমিদ ও পটিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কবির আহমদ, র‌্যাব-৭ এর পরিদর্শক নূরে আলম ও পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার।  এ সময় তারা সন্ত্রাসীদের খোঁজে গহীন পাহাড়ের চিতাখোলা, চিল্লাইছড়ি, ধামাইখাল, ভান্ডালজুরি খাল, চান মিঞার খামার, ভান্ডালজুড়ি খালের মুখ, পুলিক পেট, দামাই ছড়ির মুখ, সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলমের খামার ও ভাঙ্গাছড়ি এলাকায় অভিযান চালালেও তাদের আস্তানা খুঁজে পায়নি।
উল্লেখ্য, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘদিন ৩ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রæপ সক্রিয় রয়েছে।  তারা প্রতিনিয়ত বাগান মালিক ও শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি করছে।  এর কোনো কোনো ঘটনা প্রকাশ পেলেও অধিকাংশ ঘটনাই থেকে যায় অগোচরে।  এসব সন্ত্রাসির ভয়ে পাহাড়ে বাগান মালিকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না।  তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ের বাগান মালিক ও কাজে যাওয়া শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।  এর মধ্যে রয়েছে দুটি চাকমা গ্রুপ ও একটি বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপ।
স্থানীয়রা জানান, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ করছে পাহাড়ি ৩ সন্ত্রাসি গ্রুপ।  তিনটি গ্রুপের মধ্যে দুটি গ্রুপের নির্দিষ্ট পোষাক থাকলেও একটি গ্রুপের নির্দিষ্ট কোনো পোষাক নেই।  তবে তিনটি গ্রুপের কাছেই রয়েছে ভারী অস্ত্র।  গত দুই বছর ধরে একটি চাকমা সন্ত্রাসি গ্রুপ পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন দুটি চাকমা গ্রুপ ও একটি শরফভাটা এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসিদের সমন্বয়ে গঠিত সন্ত্রাসি গ্রুপ পাহাড় চষে বেড়াচ্ছে।  এদের মধ্যে চাকমা দুটি গ্রুপের মধ্যে একটি গ্রুপ জলপাই কালারের পোষাক ও অন্যটি দেশীয় একটি বাহিনীর সাথে মিল রেখে পোষাক ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে শত শত কৃষক চাষাবাদ করলেও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা আতংকে থাকেন।  এসব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকের যোগাযোগ রয়েছে।  প্রচার আছে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা ছদ্মবেশে অবস্থান নেয়।  তাদের সাথে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সখ্যতা রয়েছে।  ফলে সুযোগ বুঝে তারা অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ করে।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এলাকার কৃষক ও সাধারণ লোকজনকে অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।  যার কারণে র‌্যাব, পুলিশ ও পটিয়া সীমান্তের বান্দরবানের ডলু ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর টিম একই সময়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে।  তবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা খুঁজে পায়নি।  অভিযান চলমান রাখা হবে বলে জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/আরসি