ন্যায় বিচার চান উত্তর কাট্টলীর নওমুসলিম তোহা

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সাগরপাড়ে বেড়াতে গিয়ে পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা।  দেখতে সুন্দর হওয়ায় টিকটকের অফার পান তিনি।  পরিচিত হওয়া সেই যুবক ফজলুল করিম সুমন তাকে এমন প্রলোভনে ফেলে মায়াজালে আটকে দেন।  চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর এক হিন্দু পরিবারের মেয়ে তোহার আসল নাম পিংকি রানী দে।  সুমনের মায়াজালে আটকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে হন সমাজ ছাড়া।  এখন তার নাম ইসরাত জাহান তোহা।
বছরখানেক আগে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকার পিংকি রানী দে সাগরপাড়ে ঘুরতে গিয়ে পরিচিত হন ফজলুল করিম সুমন নামে ওই যুবকের সাথে।  পিংকির সুন্দর চেহারা দেখে টিকটকের মাধ্যমে অর্থ উপাজর্নের লোভ দেখায় সুমন।  এরপর টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হতে থাকে গাঢ়।  তারপর প্রেম ও ধর্ম পরিবর্তন করে ইসরাত জাহান তোহা বিয়ে করেন সুমনকে।  কিন্তু বিয়ের পর তোহা জানতে পারেন তিনি তার স্বামীর চতুর্থ স্ত্রী।  নিজের সাথে প্রতারণার বিষয়টি জানতে চাইলে শুরু হয় নির্যাতন।  সেই নির্যাতনে যোগ দেন ২য় স্ত্রী ও স্ত্রীর বাড়ির বাপ ভাই।
তোহাকে সরিয়ে দিতে ২য় স্ত্রীর সাথে পরিকল্পনা করে স্বামী। সেই পরিকল্পনামতে ইফতারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় তোহাকে।
এমনই অভিয়োগ করে স্বামী ও সতীনের পরিবারের সদস্যদেরসহ মোট তিনজনকে আসামি করে হত্যা চেষ্টা ও প্রতারণার মামলায় চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেছেন নিষ্ঠুর প্রতারণার শিকার তোহা।  তবে ২য় শতীন বর্তমানে গর্ভবতী অবস্থায় থাকায় মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে মামলয় অন্তুভুর্ক্ত করেননি তোহা।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ অলি উল্লাহর আদালতে স্বামী ফজলুল করিমম সুমন, ২য় স্ত্রীর মা হোসনে আরা বেগম ও শালা আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন তোহা।  আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বায়েজিদ থানার ওসিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘টিকটিক করতে গিয়ে সমাজে যেসব অনাচার হচ্ছে এই ঘটনা  তারই নিকৃষ্ট একটি উদাহরণ।  সহজ-সরল নারীদের টিকটকের নামে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের নামে নির্যাতনের এমন চিত্র আরো অনেক আছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারীকে ধর্মান্তরিত করে পবিত্র রমজানের দিনে ইফতারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যাচেষ্টার বিষয়টি ভুক্তভোগী নারীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো নারী এরকম প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন’।
ভুক্তভোগী তোহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুমনের প্রলোভনে ধর্মান্তরিত হয়ে তোহা নাম ধারণ করে বিয়ের পর থেকেই আমি সমাজচ্যুত।  ফলে সুমনকে আমি চাপ দিতে থাকি শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে তোলার জন্য।  এ বিষয়ে সুমনের সাথে একাধিকবার ঝগড়া হলে পরিশেষে পাঁচলাইশ থানার জঙ্গীশাহ্ মাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসাতে তুলে দিয়ে রাতেই পালিয়ে যায় সুমন।  পরে অনেক খোজাঁখুজির পর নগরীর বায়েজিদ এলাকার মোহাম্মদনগর বাস্তুহারা কলোনীকে সুমনকে খুঁজে পাই।  সেখানে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় অবশেষে একটি ভাড়াঘরে তুললেও কথায় কথায় আমার উপর নেমে আসে নির্যাতন’।
এভাবে অসহায় তোহার জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। শুরু হয় শারীরিক, মানসিক নির্যাতন।  এরই ধারাবাহিকতায় অবশেষে হত্যাপ্রচেষ্টা।  শেষমেষ থানাও মামলা না নেওয়ায় আদালতে আইনের আশ্রয় নেন নির্যাতিতা অসহায় নওমুসলিম নারী ইসরাজ জাহান তোহা।
ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী মুরাদ আরও জানান, ‘সুমনের সাথে বিয়ের পর বের হয়ে আসতে শুরু করে টিকটকার সুমনের আসল রূপ।  নওমুসলিম তোহা ধীরে ধীরে জানতে পারেন তিনি আসলে সুমনের ৪র্থ স্ত্রী।  চারটি স্ত্রী ছাড়া টিকটকার সুমনের সাথে আরো বেশ কয়েকজন নারীর বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।  এ সব নিয়ে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর থেকেই তোহার উপর দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন চালায় সুমন’।
তিনি বলেন, ‘সুমনকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পবিত্র রমজানে রোজা রাখতে শুরু করেন তোহা।  আর তোহাকে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামী সুমনের কাছে আবদার জানাতে থাকেন বারবার।  এটাই তোহার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।  তোহার অন্য স্ত্রীরা ততদিনে জেনে যান তোহা নামধারী পিংকির সাথে সুমনের বিয়ে হয়েছে।  তোহাকে পিংকির জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সুমনের সাথে চক্রান্তে যোগ দেন তার ২য় স্ত্রীর ভাই ও মা।  বেছে নেয়া হয় পবিত্র রমজানের ইফতারের সময়কে।  সুমনসহ তার ২য় স্ত্রীর বাড়ির লোকজন একদিন রমজানের ইফতারের সময় শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে তোহাকে হত্যার চেষ্টা করলে তোহা বিষপানে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
সুমন এ সময় তার সঙ্গীদের নিয়ে স্ত্রী তোহাকে চমেক হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।  কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সহায়তায় তোহাকে হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখে চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হয়ে আজকে অভিযুক্তদের বিরৃদ্ধে মামলাটি করেন। সংবাদসূত্র- চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডিসি/এসআইকে/আরসি