এ ঘটনার জন্য আমি অবশ্যই বিব্রত : রেলমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয় দিয়ে’ বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণের সময় জরিমানার ঘটনায় টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  এ ঘটনায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নিজেও ‘বিব্রত’ বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।  মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিব্রত, আমি যেভাবে এখানে স্বচ্ছভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি, সেখানে এ ধরনের একটি ঘটনা… সেটা যেভাবেই ঘটুক না কেন, আমি অবশ্যই বিব্রত’।
রবিবার (৮ মে) দুপুরে রেল ভবনে নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।  এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতে পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়দানকারী’ তিন যাত্রী।  জানা গেছে, টিকিট ছাড়া উঠলেও তারা রেলের এসি কেবিনে অবস্থান করছিলেন।  এতে রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে জরিমানা করেন।  পরে ওই তিন যাত্রী ঢাকায় ফিরে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ।  তবে পরে জানা যায়, ওই যাত্রীদের মধ্যে একজনের মা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর বড় বোন।  তিনি (রেলমন্ত্রীর স্ত্রী) নিজেও ফোন করে ওই টিটিইর ব্যাপারে ফোন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।  এতে কোনো তদন্ত ছাড়াই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হলে আজ রবিবার (৮ মে) টিটিইর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  বরখাস্তের আদেশ এখন কেন প্রত্যাহার করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো যাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন।  যাত্রীর আত্মীয় হিসেবে তিনিও (মন্ত্রীর স্ত্রী) ফোন দিতে পারেন, তবে মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে তিনি ফোন দিতে পারেন না।  কারণ, তিনি তো আমাকেই বলতে পারেন।  আমার স্ত্রীর যদি রেলওয়ে সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তার উচিত ছিল আমার সঙ্গে কথা বলা, এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু সেটা সে করেনি।  সেক্ষেত্রে কিছুটা ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমার ধারণা।  যে কারণে আমি মনে করি এই বরখাস্তের আদেশটি সঠিক হয়নি।  তাই এটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী তার স্ত্রীর ফোনে অভিযোগ করার বিষয়টি স্বীকার করেন।  তবে তার এই অভিযোগে টিটিকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা তা তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান।  সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন বরখাস্ত করা হলো, এটাই আমরা এখন তদন্ত করে দেখবো।  কীভাবে বরখাস্ত করলো’।
তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা তো এত তাড়াতাড়ি ডিসিও’র পাওয়ার কথা না।  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একজন ডিসিও।  এর ওপরে আরও কর্মকর্তা আছেন’।
তবে গতকাল শনিবার রেলমন্ত্রী তাদের নিজেদের আত্মীয় বলে অস্বীকার করেছিলেন।  আজ আবারও বিষয়টি উঠে এলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যেভাবে অভিযোগটি শুনেছেন, আমিও সেভাবে পরে শুনেছি।  আমিও আগাম কিছু জানতাম না, আমি নাকি (ওই ছেলেদের মাকে) বলেছি, দুঃখিত… আমার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি। আমি আগে জানতাম না, তারা আমার আত্মীয়।  চেনার কথাও না।  পরে আমি জেনেছি।  তবে ওই ছেলেদের মায়ের সঙ্গে আমার ফোনে কোনো কথা হয়নি।  এটা ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে সে’।
তিনি বলেন, ‘৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। সে ঢাকাতেই থাকে। তার নানার বাড়ি, মামার বাড়ি হলো সেখানে। যারা এটা করেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মন্ত্রী, ডিজি ও সচিব ছাড়া আর কারও বিনা টিকিটে ভ্রমণের সুযোগ নেই।  মন্ত্রীর ছেলে হোক, স্ত্রী হোক, রাজনৈতিক নেতা হোক, কারও বিনা টিকিটে ভ্রমণের সুযোগ নেই।  কেউ প্লেনে উঠলেও সে যাত্রী, যখন তিনি রেলে উঠবেন তখনও তিনি যাত্রী’।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।  এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘টিআইবি হঠাৎ করে এলো কোত্থেকে?  টিআইবি কে?  তাদের (বিবৃতি প্রদানে) আরও অপেক্ষা করা উচিত ছিল।  তাদের দেখা উচিত ছিল এ ঘটনায় মন্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা’।
রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমাদের রেলের পূর্ণাঙ্গ একটি অবকাঠামো দরকার।  রেল চালাতে গেলে রেল লাইন দরকার।  কিন্তু আপনারা দেখেছেন আমাদের ডাবল লাইন টঙ্গী পর্যন্ত, এরপর চট্টগ্রামের দিকে কিছু আছে।  এটা লাইন আমরা ইনহেরিট করেছি।  ডাবল লাইন ছাড়া আমাদের স্মুথ ট্রেন চালানো সম্ভব না।  খুলনা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় সব ট্রেন আমাদের ঈশ্বরদীতে আসে, তারপর সেখানে থেকে বের হয়, বঙ্গবন্ধু ব্রিজে আমাদের একটি মাত্র লাইন, সেখানে আমাদের ১৫ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হয়, ওজনের নির্দেশনা আছে।  এসব কারণে আমাদের শিডিউল বিপর্যয়ের কথাটা আসে।  কারণ, আমাদের সিঙ্গেল লাইন’।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, পূর্বাঞ্চলে এই অভিযোগ এখন নেই, সব অভিযোগ পশ্চিমাঞ্চলে’।  নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে সেটি অনভিপ্রেত, বিব্রত।  মানুষও চায় যে আমাদের যে ত্রুটি, যারা সার্ভিস দেয় তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।  ঘটনাটি কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে, সেজন্য প্রতিক্রিয়া হয়েছে।  এর আগেও এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।  যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ ছিল।  রেলের স্টাফরা এমন কোন কার্যক্রম করবে না, যাতে রেলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’।
সহজ ডটকম রেলের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রেলের টিকিট বিক্রির জন্য ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছে।  সাতটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল, এরমধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সহজ কাজটি পায়’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ