অর্থপাচারকারীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না : হাইকোর্ট

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অর্থপাচারের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার পি কে হালদার প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের বিভিন্ন আদেশের কারণেই পি কে হালদার আজ সারা বিশ্বে অন্যভাবে আলোচিত।  অর্থপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত।  আমরা এমন আদেশ দেবো, পি কে হালদার ও অন্য অর্থপাচারকারীরা পৃথিবীর কোথাও শান্তিতে থাকতে পারবে না।
পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে চাওয়া রুল শুনানির সময় মঙ্গলবার (১৭ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।  আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।  রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা শুধু নির্দিষ্ট করে দিন অর্থপাচারকারীরা কোথায় আছেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেবো।
পরে আদালত পি কে হালদারকে গ্রেফতার ও দেশে ফিরিয়ে আনতে জারি করা রুল শুনানির জন্য আগামি ১২ জুন দিন ধার্য করেন।  একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলার তথ্য জানাতে দুদককে নির্দেশ দেন।
এর আগে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে পি কে হালদার দেশে ফিরে এলে কোনো মামলায় আটক বা গ্রেফতার না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি আবেদন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।  তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন- পি কে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান, তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।  বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।  পরে একই বছরের ১৯ নভেম্বর এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে পি কে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়টি হাইকোর্টকে জানানো হয়।  পি কে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়- তিনি দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন।  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সার্বিক দিক বিবেচনার পর পি কে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট।  তবে আইএলএফএসএল’র আবেদন নাকচ করে দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।  পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পি কে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান, সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
পি কে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে আইএলএফএসএলের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।  তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পরে আর তিনি দেশে ফেরেননি।
এরপর হাইকোর্টে দাখিল করা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, পি কে হালদার-কাণ্ডে ৮৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।  তাদের সব অ্যাকাউন্ট এরইমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।  আর এসব তথ্যের আলোকে দুদক কাজ করছে।  এই রিপোর্টের মাধ্যমে পি কে হালদারের অর্থপাচারের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসে।  ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি পাচার করেছেন এবং পাচার করা অর্থ কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতে পাঠিয়েছেন।
তবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে গাঢাকা দিয়েছিলেন বাংলাদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার।  তিনি শিবশংকর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।  তৈরি করেন ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ডসহ বিভিন্ন ভারতীয় নথি।  সেখানে তিনি নিয়মিত ভোট দিতেন, নিযুক্ত ছিলেন সরকারি চাকরিতেও।  গত ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে ধরা পড়েন তিনি।  তার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন আরও পাঁচ জন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ