র‍্যাবকে মারধর, মিরসরাইয়ে আতঙ্ক কাটেনি এখনো

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে’ গিয়ে গত ২৫ মে মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট বাজারে এক সহযোগীসহ দুই র‌্যাব সদস্যের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনার তিন দিন কেটে গেলেও বারৈয়ারহাট পৌর বাজার এলাকায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি।  ঘটনার পরদিন আতঙ্কিত ওই বাজারের প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল।  পরিস্থিতি এখনও অস্বাভাবিক।  শনিবার গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অধিকাংশই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
ডাকাত সন্দেহে সাদা পোশাকে থাকা র‍্যাবের দুই সদস্যের ওপর মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়েছে বলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।  এ ঘটনায় শুক্রবার র‍্যাবের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা হয়।  মামলাগুলোতে আসামি হিসেবে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।  মামলাগুলোতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।  তাই বাজারজুড়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় তরুণদের মধ্যে।
শনিবার দুপুর থেকে বারৈয়ারহাট পৌর বাজার এলাকায় একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।  এ সময় কেউই নিজের নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।  তারা জানান, সেদিনের ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই বিস্মিত।  এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাবে, কেউ চিন্তাও করেনি।  অনেকেই সেদিন না বুঝে শুধু হুজুগের বশে সেই ঘটনায় জড়িয়ে গেছে।  তারাই এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে।  সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখনও থমথমে।
কামরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বলেন, ‘বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও অধিকাংশই বন্ধ।  ওই ঘটনা নিয়ে স্থানীয়রা কথা বলতেও নারাজ।  যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের স্বজনরাও পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলছে না।  এলাকায় এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এমন ঘটনার নজির নেই।  স্থানীয়দের মধ্যে তাই গ্রেফতার আতঙ্ক ও ভয় কাজ করছে’।
বারৈয়ারহাট পৌর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্যাহও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন আতঙ্কের আভাস দিয়েছেন।  তিনি বলেন, ‘ঘটনার সাথে ব্যবসায়ীরা জড়িত না।  কিন্তু র‍্যাব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতে পারে এই ভয়ে কেউ দোকানপাট খুলছে না।  আবার যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের অনেক স্বজন এই বাজারের ব্যবসায়ী। তারাও ভয়ে আছেন।  স্থানীয় মানুষও বাজারে আসা কমিয়ে দিয়েছে’।
হেদায়েত উল্যাহ জানান, ওই বাজারে ৫ বছর আগে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল।  তখন থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের ডাকাতের ভীতি আছে।  তাই ঘটনার সময় ওই দুই র‌্যাব সদস্যকে অনেকে ডাকাতই ভেবেছিল।  তিনি আরও জানান, শনিবার র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বারৈয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়েছে।  হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।  তবে খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছে র‍্যাব।
এদিকে ওই হামলার ঘটনার পর থেকে বারৈয়ারহাট পৌর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের আনাগোনা বেড়েছে।  তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বারৈয়ারহাট পৌরসভার উদ্যোগে শনিবার একটি শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বেলা ১১ টায় হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে র‍্যাব সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।  ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে সবাইকে সচেতন থাকারও আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় বারৈয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘গত ২৫ মে পৌর সদরে র‍্যাব সদস্যদের ওপর না বুঝে ডাকাত সন্দেহে যে হামলা হয়েছে, তার জন্য আমরা অনুতপ্ত।  আমরা চাই এ ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তদন্ত করে তাদের বের করা হোক। এ ঘটনায় নিরীহ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করছি’।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর হোসেন মামুন বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র‍্যাব সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা পরিষ্কার অপরাধ।  আইন হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই কারও’।  তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিন র‍্যাব সদস্যদের দুটি অস্ত্র হারিয়ে গেছে।  অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে একটি উদ্ধার করা গেছে।  বুঝে বা না বুঝে অপর অস্ত্রটি যে বা যারা নিয়েছেন বিলম্ব না করে সেটি আমাদের দিয়ে যাবেন।  এটি সরকারি সম্পদ।  স্বেচ্ছায় এ অস্ত্র জমা না দিলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ