তোমার ভোট আমি মারব : বাঁশখালীর নৌকারপ্রার্থী মুজিবুল

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
কাগজে ভোট হলে সিল মারা ব্যাপারই ছিল না, ইভিএমেও হবে বলে গোপন কক্ষে কর্মী রেখে নিজের মার্কায় টিপ দিতে বাধ্য করার কথা বলে সমালোচিত নৌকা মার্কার প্রার্থীর আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।  তাতে দেখা যায়, তিনি আরেকজনের ভোট নিজে দিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন।  তার মতে, এটাই হলো সুষ্ঠু ভোট।
অবশ্য এই ভোট তিনি নিজের জন্য নেবেন, এমনটা নয়।  গত জানুয়ারিতে বাঁশখালী পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি উদাহরণ টানেন যে, ইভিএমেও অন্যের হয়ে ভোট নেয়া সম্ভব।
চট্টগ্রাম বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট দাঁড়িয়েছেন মুজিবুল হক চৌধুরী।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মার্কা নৌকা পেয়েছেন তিনি।  আগামি ১৫ জুনের ভোটে জোরজবরদস্তি করতে তার প্রকাশ্য নানা বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত সোমবার ‘ইভিএম না হলে ভোট আমি মেরে দিতাম’ নির্বাচনি প্রচারের এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।  এই ভিডিওটির সত্যতা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।  আগামি বুধবারের মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে মুজিবুলের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।  যেখানে তিনি নিজেই ইভিএমে অন্যের ভোট দিয়ে দেবেন বলেন এবং সেটিকেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন তিনি।  এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন তার ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে বলে দাবি করেন নৌকার এই প্রার্থী।
৫৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি এখন ভাইরাল।  ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভোট সুষ্ঠু করি যে আমরা, অসুষ্ঠু করি যেও আমরা।  আমরা বললে সুষ্ঠু, না বললে অসুষ্ঠু। যেদিকে দেখি, সেদিকেই’।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে হওয়া বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  বলেন, ‘পৌরসভার ভোটের সময় আমাকে এক বিএনপি নেতা ফোন দিয়েছিল।  বলে যে, ‘আমাকে মারতেছে, এভাবে গালি দিচ্ছে’।  আমি বললাম, ‘কেন কথা বলতেছ, কথা বলিও না’।  সে বলে যে, ‘কেউ কেউ বলতেছে কামরুল (স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী) মেয়র হবে, সুষ্ঠু ভোট হবে’।  আমি বললাম, ‘সুষ্ঠু ভোট হবে সরকার লিখিত দিয়েছে নাকি?’  সে বলতেছে, ‘কেন, ইভিএমে ভোট হবে’।  আমি বলছি, ‘ইভিএমে নিতে (ভোট) পারে না?’  সে বলে যে, ‘না’।  আমি বললাম, ‘তোমার ভোট আমি নিজে মারব।  এটা হলো সুষ্ঠু ভোট।  আমাদের এগুলো জীবনেও জিজ্ঞেস করতে হবে না’।
মসজিদের মুসল্লিদের মতো সবাইকে ভোট দিতে হয় না উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলের এ চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘মুসলমানি কাজ হচ্ছে একজনে নামাজ পড়বে, এর পেছনে আরও পাঁচ হাজার মানুষ নামাজ পড়বে। এত মানুষের ভোট দেয়ার দরকারও নাই’।
এ ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভিডিওটি পুরোনো, ২৮ তারিখের।  এটা অলরেডি পত্র-পত্রিকায় আসছে।  আর এ রকম কথাগুলো আমি বলিও নাই’।
চেয়ারম্যান প্রার্থীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকম চাকমা বলেন, ‘আমরা ভিডিওটি এখনও দেখিনি।  দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব’।
আগে ছড়ানো ভিডিওতে যা ছিল
গত সোমবার যে ভিডিওটি ছড়ায়, তাতে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী মুজিবুল এক সমাবেশে নিজের কর্মীদের বলেন, ব্যালটে ভোট হলে তিনি সহজেই সব ভোট দিয়ে দিতে পারতেন।  কিন্তু যেহেতু ইভিএমে ভোট হবে, তাই তার অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে।  তিনি বলেন, ‘তো এখানে ইভিএম একটা করেছে সরকার। তো কী করতাম।  একটু কষ্ট করে গিয়ে আঙুলে চাপ দিয়ে ভোট দিতে হবে।  চাপ দিতে না পারলে চাপ দেয়ার জন্য সেখানে আমি মানুষ রাখব।  তো আমাকে একটু দোয়া করবেন সকলে।  রিকশা করে পারেন, যেভাবে পারেন ভোটটা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।  কারণ, ইভিএমের ভোট।  ইভিএম না হলে আমি কাউকে খুঁজতাম না, ভোট আমি মেরে দিতাম।  যেভাবে পারি ভোটটা মেরে দিতাম।  ইভিএমে আইডি কার্ড ঢুকিয়ে দিতে হয়, নইলে হয় না।  এটা না হলে আমি রাতেই নিয়ে ফেলতাম।  তো আপনারা একটু কষ্ট করেন, আপনাদের একটু কষ্ট করে ওটা নিয়ে যেতে হবে।  গিয়ে মেশিনে ফিঙ্গার দিতে হবে। কথা বোঝেননি?’
ইভিএমের চ্যালেঞ্জ মুজিবুলদের থামানো
ব্যালটের ভোটের ক্ষেত্রে একজনের কাগজ অন্যের জোর করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটেছে।  তবে ইভিএমে একজন ভোটারের আঙুলের ছাপে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয় বলে একজনের ভোট অন্যের দেয়া সম্ভব নয়।
তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গোপন কক্ষে থাকা ইভিএম মেশিনে বোতাম টিপে ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে।  এমনও দেখা গেছে, গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে দেখিয়ে দেয়ার নাম করে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়।  এটি প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা করে থাকেন।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।  তিনি বলেন, ‘ইভিএমের মধ্যে চ্যালেঞ্জ একটাই; আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না।  একটা ডাকাত, সন্ত্রাসী গোপন কক্ষে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে।  বলে, আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান।  দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ’।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ