নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন বিচ্ছেদ ৮ দম্পত্তির!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নারায়ণগঞ্জে বেশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা।  প্রতিদিন গড়ে ৮-এর বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।  যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি, বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক, দ্বিতীয় বিয়ে, পারিবারিক কলহ, অভাব-অনটন, বনিবনা না হওয়াসহ নানা কারণে এ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র বলছে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক নারায়ণগঞ্জে বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়েছে ৮ হাজার ১৮৩টি।  এর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ৩ হাজার ১৪২ জনের।  সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে আটটির বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।
২০২০ সালের একটি তথ্য বলছে, ওই বছর জেলায় ৭ হাজার ৩২৬টি বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।  তার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ২ হাজার ৫৬৩টি।  ২০১৯ সালে ৯ হাজার ৭১৫টি বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়েছে।  এর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ৩ হাজার ২৯৮টি।  এর আগের বছর ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১২৩টি বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে।  বিচ্ছেদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩টি।  এসব পরিসংখ্যান বলছে নারায়ণগঞ্জে বেশ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তালাকবিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হান্নান মিয়া জানান, ‘গত এক বছরে আমাদের এখানে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে মোট ৯৮১টি।  সবগুলো আবেদন বিচ্ছেদে পরিণত হয়েছে’।
বিবাহবিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে জানতে ফাহমিদা জান্নাত নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমাদের লাভ ম্যারেজ ছিল।  আগে থেকেই একে অপরকে পছন্দ করতাম।  এরপর আমরা বিয়ে করি।  বিয়ের কয়েক বছর আমাদের সুখের সংসার ছিল।  দুজনই সবসময় হাসিখুশিতে মেতে থাকতাম।  কিন্তু সেই হাসিখুশি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।  স্বামী অলস।  কোনো কর্ম করতে চায় না।  যে কারণে সংসারে অভাব দেখা দেয়।  অভাব দেখা দিলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় সেটা তো প্রচলিত কথা।  একপর্যায়ে গিয়ে আমাদের সংসারটা আর টিকে রইলো না।  দুজনই এখন আলাদা’।
শহরের আরেক বাসিন্দা আরমান বলেন, ‘পরিবারের সবার মতামতের ভিত্তিতেই বিয়ে করেছিলাম।  কিন্তু বিয়ের পর থেকেই লক্ষ্য করি আমার স্ত্রীর সংসারের দিকে মনোযোগ কম।  সে সবসময় বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে।  একপর্যায়ে শুনি তার এক বন্ধুর সঙ্গে সে সম্পর্কে জড়িয়েছে।  এ নিয়ে প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক হতো।  সবশেষ তার সঙ্গে আমার আর সংসার করা হযনি।  স্ত্রীর ইচ্ছায়ই বিবাহবিচ্ছেদ হয়’।
স্বামীর শাসনকে স্বাধীনতা হরণ মনে করা, পরকীয়া, ভার্চুয়াল লাইফস্টাইল, সন্তান-সংসারকে ঝামেলা মনে করা, বর্তমান পরিস্থিতিতে আয় কমে যাওয়াসহ নানা কারণেই বিচ্ছেদ বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলম।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কাজি সমিতির সভাপতি মো. ইসলাম মিয়া বলেন, অভাব-অনটনের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে।  তবে নারী নির্যাতন, যৌতুকসহ একাধিক বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ।  তিনি বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ এখন সহজ হয়ে গেছে।  সবাই এটাকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসিনা পারভীন বলেন, ‘এখন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে।  আগে মেয়েরা সহজে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারতো না।  শত কষ্ট করে হলেও সংসার ধরে রাখতো।  কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। নারী নির্যাতন, পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, মেয়েদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা, বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে নারীরা সোচ্চার হয়েছে।  যে কারণে সংসারে কোনো বিপত্তি ঘটতেই তা বিচ্ছেদে পরিণত হয়’।
বিবাহবিচ্ছেদ রোধে করণীয় বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বলছেন, মনের অমিল হলে অথবা সামান্য কোনো বিষয়ে ঝগড়া হলেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।  এসব প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছাড় দেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে।  মাদকাসক্ত, বেকারত্ব, অভাব-অনটন, নারী নির্যাতন, মোবাইল-ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কে জড়ানোর ফলে তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন এ আইনজীবী। সূত্র- জাগোনিউজ

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ