বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আগামি ১০ জুলাই ত্যাগের মহিমায় মুসলিম জনগোষ্ঠী উদযাপন করবে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। কুরবানীর এই ঈদকে ঘিরে তাই সর্বত্রই প্রস্তুতি চোখে পড়ছে। চ ট্টগ্রাম নগরে মোট ৭টিসহ দেশজুড়ে জমে উঠছে পশুরহাটগুলো। এই পশুরহাটকে ঘিরে প্রতিবছরই রাজনৈতিক পরিচয়ে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজিতে যুক্ত থাকে একাধিক সিন্ডিকেট। তাদের দৌড়াত্মে দুর্ভোগে পড়েন কুরবানীর পশু বিক্রি করতে আসা বেপারি ও কিনতে আসা সাধারণ মানুষ। এই চাঁদবাজির দৌড়াত্মে মূল্য বৃদ্ধি পায় পশুর। ফলে বিপাকে পড়েন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চাঁদাবাজদের এমন দৌড়াত্ম প্রতিরোধে বেশ তৎপর দেখা গেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) বাজারগুলোর নিরাপত্তায় পুলিশের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে যা চোখে পড়ছে সর্বত্রই। এরবাইরেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমও চোখে পড়েছে বেশ কয়েকটি।
তবে, নগরের বেশ কিছু এলাকায় বেশ আয়োজন করেই জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে খেলার মাঠে পশুরহাট বসাতে দেখা গেছে। নগরের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে খেলার মাঠে বেশ বড় প্যান্ডেল সাঁটিয়ে বসানো হয়েছে গরুর বাজার। যদিও নগরে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৭টি বাজার বসানোর বাইরে আর কোনো বাজার বসাতোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফিরোজশাহ সরকারি খেলার মাঠে আরিবাহ মিল্ক অ্যান্ড ফুড্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান গরুর বাজার বসিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঝাউতলা ডিজেল কলোনী মাঠ এবং সেগুনবাজার ত্রিভুজমাঠে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল গরুর বাজার। সেগুলো স্থানীয় কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর লোকজন বসিয়েছে বলে জানান ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনও জানেন না রেলের জায়গায় বসেছে এতোবড় হাট। তবে চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানালেন দৈনিক চট্টগ্রামকে।
আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ খেলার মাঠে কাউন্সিলর কর্তৃক গরুরহাট বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অন্যদিকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্থাপিত ২টি গরুর বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ চাকমা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. শামসুল আলম জানান, নগরের গরুর বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পোষাকের পাশাপাশি সাদা পোষাকেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গরুর বাজারে নিরব চাঁদাবাজি রুখে দেওয়া হবে। চাঁদাবাজি করার প্রচেষ্টা বন্ধে আমরা সেভাবেই কাজ করছি। তিনি ৭টি অনুমোদিত পশুরহাট ছাড়া আর কোনো হাট বসানোর সুযোগ নেই বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, জাল নোটের ব্যবহার রোধে ব্যাংক ও ইজারাদারদের পক্ষ থেকে মেশিন বসানো হবে। জাল নোটের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো হাট বসতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছে র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন। গরুর বাজারে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ড্রোন ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেট, ওয়াচ টাওয়ার ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মাঠে সক্রিয় রয়েছে। নগদ টাকা বহনে পুলিশি স্কট দেওয়া হচ্ছে কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়াই।
সিএমপির সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশুর হাটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা, ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, যাত্রীদের বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঈদের আনন্দে পর্যটকরা যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকেন সেজন্য ঈদ ও ঈদ পরবর্তী সময়ে দর্শনীয় স্থানসহ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহনে নিরাপত্তা দেবে সিএমপি।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ ও জনসংযোগ) শাহাদত হুসেন রাসেল জানান, ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ। নগরের সবক’টি পশুর বাজারকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমতি দেয়া ৪টি অস্থায়ী এবং ৩টি স্থায়ী পশুরহাট ছাড়া অন্য কোথাও সামিয়ানা টাঙিয়ে পশুরহাট বসানোর কোনো অনুমতি নেই। এই ধরণের তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে আমরা সেগুলো বন্ধ করছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমরা নগরে মোট ৭টি বাসার বসানোর অনুমতি দিয়েছি। এর বাইরে কোনো বাজার বসানোর অনুমতি দেইনি। অনুমতি ছাড়া যে পশুরহাটগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো আমি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি এখনই।
এর একটু পরেই মেয়র এই প্রতিবেদককে আবারও ফোন করে ৯ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের পৃষ্ঠপোষকতায় বসানো ২টি গরুর বাজারের ঠিকানা লিখে নেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, রেলওয়ে কাউকে রেলওয়ের জায়গায় গরুরহাট বসানোর অনুমতি দেয়নি। আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি এখনই খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ডিসি/এসআইকে/সিসি