চবি ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিওকরণে জড়িত ৬ : র‌্যাব-৭

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মোট ৬ জন জড়িত।  তারা ছাত্রীকে মারধরের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণেরও চেষ্টা করেন।
র‌্যাব-৭-এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে শনিবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।  র‌্যাব-৭-এর এই অধিনায়ক বলেন, ‘তারা তিনটি মোবাইলে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে।  এর মধ্যে দুটি মোবাইল ওই ছাত্রী ও তার ছেলে বন্ধুর।  অন্যটি ঘটনার হোতা আজিম হোসাইনের।  আজিম নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে’।
যৌন নিপীড়নে জড়িতদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তিনজন স্থানীয় বহিরাগত।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আজিম হোসাইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নুর হোসেন শাওন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার বাবু।  বহিরাগতরা হলেন মো. সাইফুল, হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা ও মো. সাইফুল।
তাদের মধ্যে দুই সাইফুল ছাড়া বাকিরা গ্রেফতার হয়েছেন।
র‍্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, ‘শুক্রবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজিমকে গ্রেফতার করা হয়।  সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং স্থানীয়।  তার নেতৃত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে।  তাকে গ্রেফতারের পর আমরা বাকিদের নাম পাই’।
যেভাবে যৌন নিপীড়ন
র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, ‘অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেদিন রাত ১০টা-সাড়ে ১০ টার দিকে ওই ছাত্রী তার এক ছেলে বন্ধুসহ হলের দিকে ফিরছিলেন।  আজিম ও তার গ্রুপটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিতে থাকে।  মোটরসাইকেল দুটি ছিল সাইফুল ও শাওনের।  ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ তাদের নজরে আসে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিক থেকে হেঁটে আসছে, জায়গাটি একটু নির্জন।  শুরুতে তারা গিয়ে ভুক্তভোগীদের চার্জ করেন।  ছাত্রীর ছেলে বন্ধুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না।  অভিযুক্তরা তাদের কাছে গিয়ে এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করেন।  ছেলে বন্ধুর কাছে দাবি করা হয় চাঁদা।  একপর্যায়ে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়।  তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।  পরে ছয়জন তাদের ওপর আরও বেশি চড়াও হয়।  ছেলেটিকে আটকে রেখে মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে।  প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে, তারপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে’।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও টাকা পয়সা নিয়ে নেয়ার পর তারা (জড়িতরা) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জানিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তখন ভুক্তভোগীরা একটি হলে গিয়ে এক ছাত্রের মোবাইল থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ জানায়।
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাইনি।  যার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে, আজিম, সে অকপটে বলেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তাৎক্ষণিক।  কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না বা মেয়েটিকে টার্গেট করার কোনো প্ল্যান ছিল না।  এমনকি মেয়েটিও আমাদের বলেছে, সে আজিমকে আগে থেকে চিনতো না’।
আজিমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজিম যেহেতু এলাকায় অবস্থান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এই কারণে এলাকায় তার প্রভাব ছিল।  এই প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সে হয়তো ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জেনেছি।  এগুলো তদন্ত করে আমরা বের করব’।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত সবাই বলছে তারা ছাত্রলীগ সমর্থন করে।  সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে।  কিন্তু তাদের কোনো পদ-পদবি নেই।  তারা যেটা বলছে যে, তাদের মধ্যে দুই গ্রুপেরই সমর্থক রয়েছে।  এখানে নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের কেউ না।  তাদের ভাষ্য অনুযায়ী একেক জন একেক গ্রুপ সমর্থন করে।  সমর্থন করা মানেই আমি বলতে পারিনা যে, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।  সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে, জনসাধারণ হিসেবে তার অধিকার রয়েছে’।
যা বলছে তদন্ত কমিটি
এর আগে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দুজনের নাম পরিচয় জানায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।  তারা হলেন, মূল অভিযুক্ত মোহাম্মদ আজিম হোসাইন ও ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান হৃদয় (বান্টি)।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া শনিবার সকালে দু’জনের নাম নিশ্চিত করেন।  তিনি বলেন, ‘প্রথমে ওই ছাত্রী সময় ও জায়গার ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।  এ কারণে দোষীদের শনাক্ত করতে সময় লেগেছে।  পরে ছাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।  তাদের একজনের নাম মেহেদী হাসান হৃদয় ও আরেকজন আজিম হোসাইন’।
তবে র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের সম্পৃক্ততার তথ্য আসেনি।  বাহিনীটি বলছে, ভুল করে তার নাম তদন্ত কমিটি বলে থাকতে পারে।
তদন্ত কমিটি যাদের নাম বলেছে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের সঙ্গে একাধিক ছবি ও সেলফিতে দেখা গেছে।  এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশেও ছিল তাদের সরব উপস্থিতি।
তবে অভিযুক্তরা তার কর্মী নয় বলে দাবি করেছেন সভাপতি রেজাউল হক।  তিনি বলেন, ‘তারা বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসির সদস্য।  এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না।  বিশ্ববিদ্যালয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।  আমি ছাত্রলীগের সভাপতি, আমার সঙ্গে যে কেউ ছবি তুলতে পারে’।

ডিসি/এসআইকে/আরসি