বিব্রত পুলিশ, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হিরো আলম

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আলোচিত-সমালোচিত তারকা হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান না গাইতে মুচলেকা নেওয়া, তার চেয়ারা নিয়ে ব্যঙ্গ করে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও স্থান পেয়েছে।  ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন-বিবিসি ও এজেন্সি ফ্রান্স প্রেস-এএফপি হিরো আলমকে পুলিশের তুলে নেওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে অপমান-অপদস্থ করাসহ রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের গান না গাওয়া, নাম থেকে ‘হিরো’ শব্দ বাদ দেওয়া নিয়ে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সমালোচনা চলছে।  এতে একরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  তারা বলছেন, হিরো আলমকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে এই বিতর্ক হতো না।
গত ২৭ জুলাই ভোরে রামপুরার নিজস্ব কার্যালয় থেকে হিরো আলমকে তুলে আনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।  মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে প্রায় ৮ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  মূলত একটি খণ্ড নাটকে পুলিশ কনস্টেবলের পোশাক পরে ডিআইজির ভূমিকায় অভিনয় করা নিয়ে তাকে তুলে আনা হয়।  তবে ডিবি কার্যালয়ে তাকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান না গাওয়াসহ পুলিশ তার নাম থেকে ‘হিরো’ শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ আশরাফুল আলম সাঈদ ওরফে হিরো আলমের।
হিরো আলমকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান গাইতে নিষেধ করায় গোয়েন্দা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।  একইসঙ্গে নাম থেকে হিরো শব্দটি বাদ দেওয়া ও চেহারা নিয়ে তাচ্ছিল্য করার বিষয়টিকে বর্ণবাদী আচরণ বলে আখ্যায়িত করেন অনেকেই।  এরইমধ্যে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পাওয়ায় অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুধু পুলিশের পোশাক নিয়ে তাকে সতর্ক করাটাই সমীচীন ছিল।  কারণ, নাটক বা নাটিকায় পুলিশের পোশাক পরে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার বিষয় রয়েছে।  একইসঙ্গে পোশাক ও র‌্যাংক-ব্যাজের মাধ্যমে পুলিশের পদ-পদবি নির্দেশ করে।  হিরো আলম কনস্টেবল পদমর্যাদার পোশাক পরে ডিআইজির পদমর্যাদার পরিচয় দিয়ে পুলিশের সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, কিন্তু পুলিশ কোনোভাবেই হিরো আলমকে ডেকে এনে তার নাম, চেহারা বা কোন গান গাইবে বা গাইবে না, সে বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারে না।  এতে সামগ্রিকভাবে পুলিশের সম্মান আরও বেশি ক্ষুন্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এই কাজে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ক্ষুব্ধ হয়েছেন।  তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে এনে ভর্ৎসনাও করেছেন। পুলিশের সব কর্মকাণ্ড আইনসিদ্ধভাবে ও পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গল বা পিআরবি মেনে করতে বলেছেন।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, করোনার সময় পুলিশ যে মানবিক কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছিল, দুই-একটি ঘটনায় সেসব সুনাম ম্লান হওয়ার উপক্রম হয়েছে।  পুলিশ সদর দফতর থেকেও দেশের সব ইউনিটকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।  আইনের বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড করে বিতর্কের জন্ম দিলে তাকে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ