পাচার অর্থ ফেরাতে সেল গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অর্থপাচার রোধ, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি সেল গঠন করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।  একইসঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্যে আগামি ২৬ অক্টোবরের দিন ঠিক করেছেন আদালত।
শুনানিতে আদালত বলেন, ‘আমরা চাই, আপনারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করেন।  যদিও আপনারা দেশের স্বার্থেই কাজ করে চলেছেন।  তবে আমরা চাই, দেশটা ভালো থাকুক।  দেশ ভালো থাকলে দেশের মানুষও ভালো থাকবে।  সবাই ভালো থাকার জন্যই দেশটা স্বাধীন করা হয়েছে’।
সুইস ব্যাংকে অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে দেওয়া প্রতিবেদন নাম-পদবি ছাড়া যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা জমা দেওয়ায় বুধবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম ও বিচারপতি খিজির হয়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করে আদেশ দেন।
এসময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।  দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে সকালে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের বিষয়ে দেওয়া প্রতিবেদন নাম-পদবি ছাড়া জমা দেওয়ায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এসময় আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একেবারে দায়সারাভাবে প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিয়েছেন। নাম-পদবি ছাড়া একটা প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দিয়ে দিলেন, এটা কি ক্যালাসনেস না?  আপনি আজ দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইছেন।  আমরা এবার ক্ষমা করছি।  কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের সতর্ক হতে হবে’।
হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশেই ফিরে আসবে।  দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো।  ভালো থাকার জন্যই দেশটা স্বাধীন হয়েছে’।  এসময় বিচারক বলেন, ‘আমরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে এ দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হবেই’।
হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ এ দেশ থেকে কমাতেই হবে।  আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ভালো হতে চাই।  যদিও এখন আমরা ভালো আছি’।  সিঙ্গাপুর আমাদের কাছাকাছি সময়ে স্বাধীন হয়েছে যোগ করেন বিচারক।  একপর্যায়ে হাইকোর্ট অর্থপাচার প্রতিরোধে সেল গঠন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের তথ্য চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামি ২৬ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে বিএফআইইউ প্রধানের প্রতি নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের পরেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দাখিল করায় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করে।  তাকে বুধবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১১ টায় হাইকোর্টে উপস্থিত হতে আদেশ দেন।
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে সরকার নির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য চায়নি বলে সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রদূত বক্তব্য দেন।  তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর পক্ষ থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে পাওয়া তথ্য প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়।  জমা দেওয়া কাগজপত্রে কারও নাম, সিল ও পদবি উল্লেখ না থাকায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়।
মঙ্গলবা রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর তথ্য আদালতে তুলে ধরেন।  এরপর অর্থ নিয়ে কাজ করে আসা বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করেন আদালত।
গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে।  তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও।  এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।  এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরদিন হাইকোর্ট সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ রাখা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছিল কি না, তা জানতে চান।
স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এ নিয়ে পদক্ষেপ জানতে চান।  তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছিল দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে ওইদিন (১১ আগস্ট) আদালত জানতে চান কী পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকে পাচার হয়েছে?  এ বিষয়ে সরকার ও দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বা দুদক কোনো তথ্য দিতে পারেনি আদালতকে।  এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।  তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আবার সামনে আসে।  গত ১৪ আগস্ট বিষয়টি আদালতে ওঠে।
ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেছিলেন, বিএফআইইউর মাধ্যমে ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল।  এরমধ্যে একজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুদক বিএফআইইউর কাছে অনুরোধ করে পত্র দেয়।  এরপর বিএফআইইউ অনুরোধ করে সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে একজনের তথ্য পেয়েছে, সেটাও অসম্পূর্ণ।
১৪ আগস্ট হাইকোর্ট লিখিতভাবে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে ঘটনা সম্পর্কে হলফনামা আকারে তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেন।  ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক হলফনামা আকারে কাগজসহ লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেয়।  পরে মঙ্গলবার বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে ওঠে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ