কাঠমিস্ত্রি থেকে অস্ত্রের কারিগর জাকের

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দূর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।  সেখানে অভিযান চালিয়ে মূল কারিগর জাকের উল্লাহকে ১০টি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।  মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে বাঁশখালীর জঙ্গল চাম্বল এলাকার গহীন পাহাড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
গ্রেফতার জাকের উল্লাহ (৫০) বাঁশখালীর জঙ্গল চাম্বল এলাকার মৌলভী নুরুল হুদার ছেলে।  অভিযানে অস্ত্রের ওই কারখানা থেকে ৮টি ওয়ান শুটারগান, দুটি টু-টু পিস্তল এবং অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব।  অভিযানের সময় অস্ত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত আরও দু-একজন পালিয়ে যান বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, গ্রেফতার জাকের উল্লাহ এক সময় কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে কৃষিকাজও করতেন।  পরে অস্ত্র তৈরির কাজ শেখেন।  অস্ত্র তৈরি থেকে বেচাবিক্রি পর্যন্ত তিন ধরনের লোকজন জড়িত থাকে।  একপক্ষ অস্ত্র তৈরি করে।  এক পক্ষ অস্ত্রগুলো বিক্রির জন্য দালালের কাজ করে।  আরেকপক্ষ অস্ত্র বিক্রি করে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো তৈরিতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়।  দালালের কাছে একেকটি অস্ত্র ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।  দালালরা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
মূলত মাদক বহন ও ব্যবসা, সাগরে জলদস্যুতা এবং বাসাবাড়িতে ডাকাতির কাজে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।  আধুনিক প্রযুক্তি মাথায় রেখে এসব অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে।  উদ্ধার হওয়া প্রতিটি অস্ত্রই সচল বলে জানান র‌্যাব অধিনায়ক।
এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জাকের র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত।  একেকটি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ধরন অনুযায়ী ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য ধরেন।  ছোট ওয়ান শুটারগানজাতীয় অস্ত্র প্রস্তুত করতে পাঁচ-ছয়দিন সময় নেন।  গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আটক জাকির ৭-৮ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত।  তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কৃষিকাজ করতেন।
অভিযানের বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, অস্ত্রের কারখানাটি দুর্গম জঙ্গল চাম্বল এলাকায়।  দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই এই অস্ত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যেতেন।  ফলে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন ছিল।  তবে গোয়েন্দা নজরদারি এবং বিশেষ কৌশলে পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করায় এই চক্রের সদস্যরা টের পাননি।
গ্রেফতার জাকের র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তারা দুজন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরির সম্পূর্ণ কাজ করতেন।  অস্ত্রের প্রকারভেদে একেকটি তৈরি করতে ন্যূনতম ৫-১৫ দিন সময় লাগতো।  তারা স্থানীয়ভাবে অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করতেন।
অস্ত্র তৈরিতে জাকের খুবই দক্ষ উল্লেখ করে র‌্যাব কর্মকর্তা মো. নূরুল আবছার বলেন, জাকের ও তার সহযোগী অস্ত্র তৈরিতে খুবই দক্ষ।  নিপুণ দক্ষতায় অস্ত্রের সব যন্ত্রাংশ এই কারখানায়ই তারা তৈরি করতেন।  অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাপাতি ওই কারখানায় রেখেছিলেন।  জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে বাঁশখালী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ