কুকুর লেলিয়ে কলেজছাত্র হিমাদ্রি হত্যাকাণ্ডে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, দু’জন খালাস

আদালত প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে চট্টগ্রামের কলেজছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হিমু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বাকি দু’জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকা তিন আসামি হলেন- মাহাবুব আলী ড্যানি, জাহিদুল ইসলাম শাওন ও জুনায়েদ রিয়াদ। এছাড়া শাহ সেলিম ওরফে টিপু ও শাহাদাত হোসেন সাজুকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার।
ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন অর রশিদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলতাফ হোসেন আমানী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ূন কবির। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আহসান উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার ও অ্যাডভোকেট মো. কামাল পারভেজ।
জানা গেছে, মাদক কারবারে বাধা দেওয়ার কারণে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার সামার ফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল হিমাদ্রীকে ধরে নিয়ে যান আসামি শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি। হিমাদ্রী ওই স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন। আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর একই বছরের ২৩ মে হিমাদ্রী মারা যান।
এ ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
বিচার শেষে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে চট্টগ্রামের কলেজছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হিমু হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর রোববার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম মানিক এ রায় ঘোষণা করেন।
বাদীপক্ষ ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের বন্ধু জাহিদুর রহমান শাওন, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি। এদের মধ্যে জুনায়েদ ও জাহিদুল পলাতক।
পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা জেল আপিল করেন।

ডিসি/এসআইকে/এনএনপি