খাগড়াছড়িতে গলাকাটা লাশ, নেপথ্যে পূর্বশত্রুতা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
এক বছর আগেও ঠিকাদারি পেশায় যুক্ত ছিল রমজান আলী। কিন্তু এই ঠিকাদারি করতে গিয়ে বিপক্ষ গ্রুপ নানানভাবে হেনস্তা-অপদস্ত করছিল ৩৫ বছরের যুবক রমজানকে। মামলাও হয়েছিল। ভেজালে জড়াতে না চাওয়া মামুন বাধ্য হয়েই ঠিকাদারী ব্যবসা ছেড়ে দেন। স্থানীয় একটি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী জীবিকার তাগিদে শুরু করেন মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালনার কাজ। সৎ পথে আয় করে সংসার চালনার এই স্পৃহাও তাকে বাঁচতে দিল না। অভিযোগ উঠেছে সেই এক বছর আগেরকার ঘটনাগুলোতে যে মানুষগুলো সম্পৃক্ত তারাই রমজান আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তরা রমজানের দুলা ভাইকেও মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটিয়েছে।
গত ২ ডিসেম্বর ভোর ৪ টার দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়িতে রমজান আলীর কলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিছু দূরেই পড়ে ছিল রমজানের মোটরসাইকেল এবং হেলমেট। এই ঘটনায় রমজান আলীর বাবা মো. ইউনুছ সিকদার গুইমারা থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন। সেই এজাহারে তিনি চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন আমবাগান রেলওয়ে কলোনীর উমর ফারুকের দুই ছেলে মো. আরাফাত (২৮) এবং মো. মনু (৪২) এবং আমবাগার ছিন্নমূল বস্তি এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে মো. অনিক (২৪) ও জয়নাল আবেদীনকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১ বছর আগে পূর্বশত্রুতার জেরে একটি হত্যা মামলায় রমজান আলীকে তারা জড়িয়েছিল। এখনো রয়েছে তার রেশ। আর সেই রেশেই রমজান আলীকে মোটরসাইকেল ভাড়ায় নিয়ে খাগড়াছড়ির নির্জন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে হত্যা করেছে তারা।
ঘটনার আগের দিন ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রমজান একটি ভাড়া নিয়ে গুইমারা যাওয়ার কথা পরিবারকে জানিয়েছিল। গুইমারার জালিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছে রাত সাড়ে ৯ টায় পরিবারকে অবহিত করেছিল ফোন করে। তার পরের দিন ভোররাতে স্থানীয়দের কাছ থেকে পুলিশ খবর পায় গুইমারার সিন্দুকছড়িতে গলাকাটা লাশের। লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায় রমজানের গলা ও পেট কাটা। ছুড়ি দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ঘটনার আগে রমজানকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয়রা। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিল হেলমেট পড়া আরো এক ব্যক্তি। তার চেহারা না দেখা গেলেও মোটরসাইকেলটি একবার দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন স্থানীয়রা ওই লোকটি পাহাড়ি কোনো ব্যক্তির বলে চিহ্নিত করলেও তার ব্যাপারে কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।
খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রশিদ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে দেখতে পাই ছুরি বা এ জাতীয় ধারালো কিছু দিয়ে তার গলায় ও পেটে আঘাত করা হয়েছে। আমরা তার সাথে বাইকে থাকা লোকটির সন্ধান করছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে যতটুকু জানলাম যে পেছনে থাকা ব্যক্তি একজন পাহাড়ি ছিলেন। তবে আমরা নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগও খতিয়ে দেখছি। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দু’টি কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। একটি হচ্ছে হয়তো ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। রমজানকে ছুরি দিয়ে আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তারপরও ওই ব্যক্তি হয়তো মোটরসাইকেলটি নিতে পারেনি। দ্বিতীয়ত- পরিবারের যে অভিযোগ, পূর্ব শত্রুতা, সেটাও হতে পারে। আমরা দুটি দিকই তদন্ত করছি। যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদেরকে আমরা এখনো ট্রেস করতে পারিনি। চেষ্টা করছি দ্রুত এর কারণ উদঘাটন করতে।
তবে যাদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কারো ফোনই সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, নিহত রমজান আলীর দেড় মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। রমজান চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।  এই ঘটনায় নিহতের বাবা ইউনুছ সিকদার গুইমারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএএইচ