সাংবাদিককে ‘দাঁত ভাঙা’ জবাব দেয়ার হুমকি রাঙ্গুনিয়ার সেই ইউপি চেয়ারম্যানের

উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহের সময় এক গণমাধ্যমকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধরের ঘটনায় হওয়া মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রধান দুই আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী ও মেম্বার মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েই ফুলের মালা গলায় এলাকায় শোডাউন করেছেন তারা। এ সময় মারধরের শিকার সাংবাদিককে ‘দাঁত ভাঙা জবাব’ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার উচ্চ আদালত থেকে শর্ত সাপেক্ষে চার সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়ে বৃহস্পতিবার রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করেন তারা।
এসময় চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিক আবু আজাদের উদ্দেশে বলেন, ‌‘আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাংবাদিক বলে ইসলামপুরবাসীর মান ক্ষুণ্ণ করেছেন। ইসলামপুরের মানকে অসম্মানিত করার জন্য যারা পাঁয়তারা করেছেন, তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমার পেছনে যারা এমন কুচক্রী করেছেন তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেব’।
পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা করলে জবাব দেয়া হবে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মামলা দায়ের করার পর গত ২৮ ডিসেম্বরও আমি অফিস করেছি। ফাইলে সাইন করেছি। আমাকে ওসি ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে, আপনি কী অফিস করেছেন? আমি ওসিকে বলেছি, আমি কী চোর-ডাকাত নাকি খুনি যে আসব না। আমি জনগণের লোক। আমি চোর-ডাকাত, খুনি হলে থানায় হাজির হব। আমাকে খুঁজতে হবে না। আমাকে খুঁজলে ইসলামপুরের মানুষ আপনাকে (ওসি) জবাব দেবে’।
তবে চেয়ারম্যানকে ফোন দেয়া হয়নি জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মামলার পর থেকে তারা (আসামিরা) পলাতক ছিল। আমি তাকে ফোন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সে অফিস করছে জানার পর আমি অফিসার পাঠিয়েছিলাম। তাদের পাওয়া যায়নি’।
২৫ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সাংবাদিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার সংবাদকর্মী আবু আজাদ অভিযোগ করেন, ‘ভাটা মালিক ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হবে না’ বলে হুমকি দিয়েছেন। তার নির্দেশেই ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহন মারধরের পর আমার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে’।
আবু আজাদ ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ করেসপনডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন, চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী, ইটভাটার ম্যানেজার কামরান, মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুড়ির নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ।
এদিকে সাংবাদিক আবু আজাদের অপহরণ ও হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আগামি ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর