ভাটিয়ারিতে ২ একরের সরকারি পুকুর ভরাট করে মার্কেট-স্থাপনা নির্মাণ

উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
জায়গাটি সরকারি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন এই জায়গাটি বড়সড় একটি পুকুর। কিন্তু স্থানীয় ভূমিদুস্য হিসেবে পরিচিত রমজান আলী নামের এক ব্যক্তি সেই পুকুর ভরাট করছিলেন জোড়েসোরে। খবর পেয়ে গত ৪ জুলাই অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যমাণের সরকারি এই জায়গাটি উদ্ধার করেছিল উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু উদ্ধারের ৫ মাসের মাথায় সেই পুকুরটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশালাকার মার্কেট। জাহাজের পাইপ ও লোহা দিয়ে মার্কেটটি নির্মাণ করে তোলা হচ্ছে ভাড়া। নেয়া হয়েছে কোটি টাকা অগ্রিম।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের কদমরসুল সালেহ কার্পেট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এই জায়গাটি অবস্থিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সেই অভিযানের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, ইউপি সদস্য আবদুর শুক্কুরসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্র্র্মকর্তাবৃন্দ।
উপজেলা প্রশাসন বলছে জায়গাটি উদ্ধার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়ার পর সেখানে কিভাবে পুকুর ভরাট হলো এবং কিভাবে মার্কেট হলো সেটাই প্রশ্ন।
জানা গেছে, মূল্যবান জায়গাটি প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে দখল করে জাহাজের লোহার পাইপ দিয়ে কয়েকটি মার্কেট গড়ে তুলছে ভূমিদস্যু রমজান আলী নামের একটি সিন্ডিকেট। সড়ক ও জনপথ বিভাগ দখলকৃত জায়গাটিতে সরকারি দখলচ্যুত না করতে লাল পতাকাও টাঙিয়েছিল। কিন্তু তাতে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনে-রাতে পুকুরে মাটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কদমরসুল জাহানাবাদ সালেহ্ কার্পেট এলাকার মুন্সী মিয়ার ছেলে মো. রমজান আলী। কদমরসুল সালেহ্ কার্পেট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ চলমান রয়েছে। পুকুরের পাশে থাকা শতাধিক বহু বছরের পুরনো সরকারি বড় বড় গাছ কেটে তা বিক্রি করে দেয়। কিছু কিছু অংশে মার্কেট ও টার্মিনাল নির্মাণ করে কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে ভাড়া তুলছে প্রতিমাসে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচরে বসে প্রশাসন। সড়ক ও জনপদ একটি নোটিশ দিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করে। কিন্তু পুকুর ভরাট ও সরকারি সম্পত্তি দখল অব্যাহত থাকায় যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন।
গত ৪ জুলাই অভিযান চালিয়ে সরকারি এই সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে ভরাট করে ফেলা পুকুরটি আবার খনন শুরু করে প্রশাসন। কিন্তু অদৃশ্য কারণ বলে পরের দিনই বন্ধ হয়ে যায় এই কার্যক্রম। এর ৫ মাস পর সেই পুকুর ভরাট করে সেখানে শুরু হয়েছে মার্কেট নির্মাণ ও ভাড়া দেয়ার কাজ।
গত ৪ জুলাই পরিচালিত অভিযানের সময়কার ছবিউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট মো. শাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘রমজান আলী নামে এক ভূমিদস্যু দীর্ঘদিন ধরেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমি দখল করে মার্কেট ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এগুলো ভাড়া দিয়ে সে লক্ষ লক্ষ টাকা অগ্রিম ও হাজার হাজার টাকা ভাড়া আদায় করছে। দুই একর এই জায়গার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। সরকারি জায়গাটিতে পুকুর ছিল। রমজান আলী পুকুর ভরাট করে ঐ স্থানে মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলে। দখল করার সময় সরকারি মূল্যবান গাছও কেটে ফেলে। সড়ক ও জনপথকে বিভাগকে বলে আমরা জায়গাটি পূর্বের স্থানে রুপ দিতে অভিযান পরিচালনা করি এবং পুকুর খননও শুরু করি। এরপর পুরো জায়গা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি জায়গাটি আবার বেদখল করছে ঐ ভূমিদস্যু’।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘আমরা ইউএনও, এসিল্যান্ডকে বলে রাখছি। উনারা যখনই সময় পান, তখনি আমাদের লোক উপস্থিত হয়ে উচ্ছেদ অভিযান কাজ পরিচালনা করবো। কিন্তু উনারা কেন গড়িমসি করছে আমার বোধদয় নয়’।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর