আদালত প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
প্রথমে করা নালিশি মামলার পর আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা মেলেনি জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। তবে ভিকটিমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষায় মিলে ধর্ষণের সত্যতা। চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ এলাকার ওই ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। ওই মামলায় অভিযুক্ত মো. শাহজাহানকে (৩২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দেন। রায়ে অভিযুক্ত শাহজাহানকে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর পিতৃ পরিচয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিত আসামি মো. শাহজাহান ওই শিশুর বাবা হিসেবে পরিচিত হবেন। শাহজাহান জোরারগঞ্জ থানার কাটাছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড মুরাদপুর গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, জোরারগঞ্জে ধর্ষণের কারণে ভিকটিমের ঔরসে শিশুর জন্ম হয়। ঘটনার ছয় বছর পর ২০১৬ সালে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে থানার দ্বারস্থ হন কিশোরী ভিকটিমের মা। পরে আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রথমে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি দাবি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পরে ভিকটিম পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ট্রাইব্যুনালে নারাজি দেয়। আদালত ভিকটিমের আবেদন গ্রহণ করে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশু এবং আসামির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ওই শিশুর সঙ্গে আসামির ডিএনএ মিলে যায়। এতে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুটি আসামির ঔরসজাত বলে প্রমাণিত হয়। একই সঙ্গে ধর্ষণেরও প্রমাণ মেলে। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এছাড়া বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া ভিকটিমের সন্তানের সব ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে। আসামির সম্পদ থেকে ওই ব্যয় বহন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় রায়ে। একই সঙ্গে আসামি মো. শাহজাহানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এ ব্যবস্থা করার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। দণ্ডিত আসামিই শিশুটির পিতা হিসেবে পরিচিত হবেন বলেও আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
ডিসি/এসআইকে/এনএনপি