গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শীর্ষ দুই জঙ্গীকে আটক করল র‌্যাব

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান ‘মাশেকুর রহমান ওরফে মাশুক ওরফে রণ বীর’ ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে আটক করেছে র‌্যাব। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার ভোর ৪টা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। সেই অভিযান চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে আটকের পর র‌্যাব জানায় পাহাড়ে-সমতলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা।
এর আগে জামাতুল আনসারের শীর্ষস্থানীয় এক নেতাসহ সশস্ত্র সদস্যদের অবস্থানের খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল সোমবার ভোরে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালায়। দুই পক্ষের তুমুল গোলাগুলির পর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আটক দু’জনের মধ্যে মাসিকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান ও শুরা সদস্য। আর তার সহযোগী আবুল বাশার ওরফে আলম এ সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি খালি কার্টিজ, দু’টি একনলা (দেশীয়) বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১০০ রাউন্ড পয়েন্ট টুটু (.২২) বোরের গুলি, নগদ ২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে জঙ্গিদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলি হয়। পরে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্রিফিং করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে জানান জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কথা র‌্যাব জানিয়েছিল গত বছরের অক্টোবরের শুরুতেই। তখনই র‌্যাব জানায়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে দূর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে জামাতুল আনসার। এরপরে পাহাড়ে ধারাবাহিক অভিযানের খবর জানিয়ে আসছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।
র‌্যাবের পরিচালক বলেন, বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দা তথ্যে তারা নিশ্চিত হন যে, রণবীর ও বাশার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে কুতুপালং সাত নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক ঘিরে সোমবার ভোর ৫ টায় যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের অবস্থান বুঝতে পেরে জঙ্গিরা পাশের পাহাড়ে চলে যায়। র‌্যাব ওখানে অভিযান শুরু করলে সশস্ত্র লোকজন র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে দুই জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয় র‌্যাব’।
যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গীরা
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পরিচালক আল মঈন বলেন, অক্টোবর মাসে র‌্যাব বাড়িছাড়া যে ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে আবুল বাশারের নামও ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আবুল বাশার সোমবার র‌্যাবকে জানিয়েছে, গত ৩ অক্টোবর র‌্যাব এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর সে তার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেটে সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে যান। সেখান থেকে তারা দু’জন বেশ কিছু দিন আগে কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে আত্মগোপন করেন’।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ