কর্ণফুলীতে পুলিশের সোর্সকে খুন করে আরেক সোর্স, গ্রেফতার ৬

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার সিডিএ আবাসিক এলাকা থেকে মোহাম্মদ কায়েস নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রবিবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আলী হোসাইন।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন মূলহোতা মো. হুমায়ুন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন ওরফে সোনা মিয়া (৩১), মো. রফিকুজ্জমান সানি মিয়া ওরফে আরফান (২২), মো. নজরুল ইসলাম ওরফে নজু (২৩), মো. রায়হান (২১) ও আব্দুল কাদের (২২)।
মঙ্গলবার (২৪ জানুযারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যার শিকার মো. কায়েস ও গ্রেফতার হুমায়ূন কবির মাদক সংক্রান্ত কাজে রাঙামাটির পাহাড়ি এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে যান। মাদকের ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে আসামি মো. হুমায়ূন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার ও মো. কায়েস চট্টগ্রাম চলে আসেন। পরে হুমায়ূন রাঙামাটিতে ওই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে পুলিশের সোর্স বলে আটক করে এবং বেধড়ক মারধর করে।
এই সময় তার অণ্ডকোষে ইট দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। সেখান থেকে সে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে চট্টগ্রাম চলে আসে এবং কায়েসই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তার সোর্সের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছে বলে পাহাড়িরা জানায়। এরপর সেদিন থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি হুমায়ুন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় কায়েসকে মেরে ফেলবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রায় তিন মাস আগে থেকেই কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল হুমায়ূন। কায়েসকে সেটা কখনো বুঝতে দিত না, উল্টো বন্ধুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কায়েসকে দেখা করতে বললে, কায়েস কখনও ৩-৪ জন সঙ্গী ছাড়া দেখা করতো না। তাই কয়েকবার কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করেও সফল হয়নি হুমায়ূন। এর মাঝে আসামি হুমায়ুন কায়েসকে কিভাবে হত্যা করবে, সেই বিষয়ে কায়েসের ঘনিষ্ঠ একজনের সঙ্গে আলোচনা করে। এরপর ওই ব্যক্তি এক লাখ টাকার মধ্যস্থায় রাজি হন। পরে গত ২০ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪ টায় কায়েসের মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে মইজ্জ্যারটেক আসতে বলেন হুমায়ূন। এর মধ্যে আসামি হুমায়ুন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কায়েসকে মেরে ফেলার জন্য তার (কায়েস) ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে লোকজন নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলে। কায়েস মইজ্জ্যারটেক এসে হুমায়ুনের সঙ্গে দেখা করলে সে তাকে চা-নাস্তা খাওয়ায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে ঘোরাঘুরি করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।
পরে সন্ধ্যা পার হলে একটি কাজের কথা বলে কায়েসকে সিএনজিতে তুলে কলেজ বাজারের দিকে ঘুরে চরলক্ষ্যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তায় সিএনজিতে কায়েসকে বসিয়ে রেখে হুমায়ূন নেমে যায় এবং সে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত থাকতে বলে মইজ্জ্যারটেক চলে যায়।
আসামি হুমায়ুন দ্রুত মইজ্জ্যারটেক থেকে আরেকটা সিএনজি নিয়ে আপ-ডাউন ভাড়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে এসে কায়েস বসে থাকা সিএনজির পেছনে এসে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো সিএনজিতে বসে থাকা কায়েসকে দু’দিক থেকে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে আসামিরা। চুরির আঘাতে কায়েস চিৎকার দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক ড্রেনের দিকে দৌড় দেয়। সেখানেও আসামিরা পুনরায় তাকে ধরে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
কায়েসের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর হুমায়ুনের ভাড়া করা সিএনজিতে চারজনকে তুলে নেয়। এরপর রায়হান ও জীবন মোটরসাইকেল করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তারা সবাই মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
আসামিদের মধ্যে মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। বাকি আসামি জাহিদ তালুকদার পলাতক রয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর