জনতার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে রক্তাক্ত একরামকে হাসপাতালে নিয়ে যায় : পিবিআই

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অটোরিকশা চালক একরাম হোসেন হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় লাইনম্যান নুর আহাম্মদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয় একরামকে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লাইনম্যান নুর আহাম্মদ (৪০), মো. জাহেদ হোসেন (২০), মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব (২০) ও মো. ইসমাইল হোসেন রোনা (২৪)। তাদের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
মামলার এজাহার ও পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে হত্যার শিকার একরাম হোসেন (২০) তার অটোরিকশা নিয়ে সড়কে বের হন। ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে কুমিরা এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
একরামের হাতে, কাঁধের ওপরে ও পেটের ডান পাশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় একরামের ভাই নুরুল হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। এসআই মো. শাহাদাত হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা। ২৬ জানুয়ারি থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করা হয়। গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পিবিআই।
গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে গত ২৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খানের আদালত আসামি নূর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনকে চারদিন এবং সাকিব ও রানার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সীতাকুণ্ডে অটোরিকশা চালক একরাম হোসেনকে হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার নুর আহাম্মদ সীতাকুণ্ড দক্ষিণ বাইপাস সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মূলত অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ের জন্য এই সমিতি খুলেন নুর আহাম্মদ। অন্যান্য আসামিরা অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ে নুর আহাম্মদের সহযোগী ছিলেন। এই লাইনে অটোরিকশা চালাতে হলে প্রত্যেক চালককে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। একরামকে আসামি নুর আহাম্মদ চাঁদা দিতে চাপ দেন। কিন্তু একরাম চাঁদা দিয়ে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুর আহাম্মদ একরামকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরও বলেন, হত্যার দিন বেলা ১১ টায় আসামিরা সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাজারে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন নুর আহাম্মদ। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে আসামিরা অটোরিকশা যোগে একরামের অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একরামের অটোরিকশাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুর এলাকায় ইপসা অফিসের সামনে পৌঁছালে নুর আহাম্মদকে বহনকারী অটোরিকশার মাধ্যমে তার গতিরোধ করা হয়। এরপর আসামিরা একরামকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় একরামকে ফেলে আসামি নুর আহাম্মদ ও সাকিব অটোরিকশাযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আরেক আসামি রানা দ্রুত বাসযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। তবে ঘটনাস্থলে লোকজন উপস্থিত হওয়ায় আসামি জাহেদ ‘সাহায্যকারী’ সেজে একরামের অটোরিকশা চালিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, একরাম অটোরিকশা চালক হওয়ায় একাধিক অটোরিকশা চালককে আমরা জিজ্ঞসাবাদ করি। একপর্যায়ে দুজন আসামি শনাক্ত হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে বাকি দুজনকেও গ্রেফতার করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেফতার চার মিলে একরামকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে তাদের সীতাকুণ্ডে নিয়ে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। রিমান্ডে থাকা চারজনের মধ্যে দুইজনকে রোববার এবং বাকি দুইজনকে সোমবার আদালতে পাঠানো হবে।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর