রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০ দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী সক্রিয় : সংসদীয় কমিটি

ফাইল ছবি

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং সাতটি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর রয়েছে আরসার নিয়ন্ত্রণ। জিরো লাইনে অবস্থিত তমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটিতে নিয়মিত টহল ও নজরদারি জোরদার করা যায়নি। একারণে কোনাপাড়া ক্যাম্পটি আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০টি দুর্বৃত্ত দল বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যংয়ে। আরএসও এবং মাস্‌টার মুন্না দল উখিয়া, পালংখালীতে; ইসলামী মাহাজ ও জাবু ডাকাত দল হোয়াইক্যংয়ে এবং নয়াপাড়া ক্যাম্পে চাকমা ডাকাত দল, নবী হোসেন ডাকাত দল, পুতিয়া ডাকাত দল, সালমান শাহ ডাকাত দল, খালেক ডাকাত দল সক্রিয় আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়- আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও নবী হোসেন ডাকাত দল প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আরসার উপস্থিতি ও তাদের সন্দেহজনক কার্যক্রম নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করেছে উল্লেখ করে বলা হয়- জিরো লাইনে অবস্থিত তমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটি আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
অপরাধ কমেছে
প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ সালে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়। এদের সার্বিক অপরাধ কিছু কমেছে বলে দেখা যায়। তবে এ সময়ে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। ২০২১ সালে যেখানে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৩২টি।
এদিকে ২০২১ সালের চুরি-ডাকাতির ঘটনা ৭৭ থেকে কমে ২০২২ সালে ৭৫টি, গোলাগুলির ঘটনা ৫১টা থেকে কমে ১৮টা, অপহরণের ঘটনা ১৭৩টি থেকে কমে ৮৬টি, আন্তঃকোন্দল ১১টি থেকে কমে একটি, মাদকের ঘটনা ২৬৮টি থেকে ২৪৯টি এবং অন্যান্য অপরাধ ৫৬৭টি থেকে কমে ৫৫৩টি সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পরযন্ত ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টির কারণ জানা যায়নি।
স্বাস্থ্যঝুঁকি
রোহিঙ্গা এলাকা এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস সি, ডিপথেরিয়া ইত্যাদির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭১০ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬১২ জনই রোহিঙ্গা। ডিসেম্বর ২২ পরযন্ত ৬১ জন রোহিঙ্গা এইচআইভিতে মৃত্যুবরণ করেছে। ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারীকে কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ৯৫ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ১২-১৩ লাখ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রতিবেদনে ধারণার কথা জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এবং মো. নাসির উদ্দিন অংশগ্রহণ করেন।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ