চবিতে ম্যারাথনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ‘রান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য ম্যারাথন আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে এই ম্যারাথন আয়োজনের বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নোটিশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের সহকারী জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মুজিবুর রহমান এই আদেশ দেন।
জানা গেছে, এই ম্যারাথন আয়োজন স্থগিত চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম ফজলুল হক রাসেল বাদি হয়ে আদালতে আবেদন করেন।
এই বিষয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. হাসান মুরাদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি নেয়। কিন্তু ওই সময় করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই আয়োজন স্থগিত হয়। করোনা পরবর্তী সময়ে যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলো, তখন সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন পুনরায় এই ম্যারাথন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে রান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুল তথ্য দিয়ে ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি গ্রহণ করে’।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন আগে থেকেই ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি নিয়েছিল, এই প্রোগ্রামটি তাদেরই ব্রেইন চাইল্ড। সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের আপত্তি লিখিতভাবে জানিয়েছে। এই লিখিত আপত্তির বিষয়টি সুরাহা না করে তড়িঘড়ি করে রান বাংলাদেশ নামের সংগঠনটিকে ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি প্রদান আদালতের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আদালত এই ম্যারাথন আয়োজনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এবং কেন এই আয়োজনের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না,তা জানতে চেয়ে নোটিশ ইস্যু করেছে। আগামি ১৫ দিনের মধ্যে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে’।
এই আবেদনে বিবাদি করা হয় ম্যারাথন আয়োজনকারী সংগঠন রান বাংলাদেশের রেস ডিরেক্টর সাজনান মোহাম্মদ, ইভেন্ট ডিরেক্টর এমএ আশেক চৌধুরী, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাজেদুল হাসান ও মো. ইমতিয়াজ আহমেদ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, উপাচার্যকেও বিবাদি করা হয়।
আবেদনে বাদি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই বিভাগের সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও চ্যারিটেবল এলামনাই সংগঠন। যা ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের নানামুখি প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিং, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, সফটওয়ার প্রসেসিংসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
সাবেক বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মেলবন্ধনের সুযোগ তৈরি করে দেশ ও দশের কল্যাণে নিয়োজিত থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান দেশে-বিদেশে তুলে ধরে আসছে এই অ্যাসোসিয়েশন। ইতোমধ্যে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, কোভিড-১৯ কালীন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৬ লাখ টাকার অনুদান প্রদান, ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ’র সঙ্গে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ আল্ট্রা রানের আয়োজন, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার, বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ নানামুখি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বিগত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ‘বিলুপ্ত প্রায় বোস্তামী কচ্ছপ বাঁচাও’ স্লোগানের হাফ ম্যারাথন আয়োজনের জন্য ওই বছরের ৪ মার্চ অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু করোনার কারণে সারাদেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে লকডাউন ঘোষণার কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি লাভের পরও হাফ ম্যারাথন ইভেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
এর মধ্যেই সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের পূর্বনির্ধারিত ম্যারাথন আয়োজনের কাজ শুরু করলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনকে ম্যারথন আয়োজনের অনুমতি প্রদান করে। এই বিষয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত আপত্তি জানায়। কিন্তু এই আপত্তির সুরাহা না করেই রান বাংলাদেশকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি প্রদান করে।
এর আগে গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে চবি ক্যাম্পাসে ২৫ কিলোমিটার ম্যারাথন আয়োজনের ঘোষণা দেয় রান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।
এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সিএসই এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন লিখিত অভিযোগে জানায়, বিভিন্ন স্থানে ম্যারাথন আয়োজনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে তাদের ম্যারাথন আয়োজন বাতিল করেছিল স্থানীয় রানার কমিউনিটি। আর্থিক ও পুরস্কার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে।
এছাড়া ম্যারাথনের আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থাকে অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথন অ্যান্ড ডিসটেন্স রেসেসকে (এইমস) মিথ্যা তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যারাথন আয়োজনের স্বীকৃতি আদায়ের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের স্বীকৃতি পেতে একই ভেন্যুতে আগে দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে সীমিত আকারেও এই ধরনের কোনো আয়োজন করেনি রান বাংলাদেশ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো যেখানে ম্যারাথন দৌড়কে জনপ্রিয় করতে এই আয়োজন করছে, সেখানে কতিপয় ব্যবসায়ী একে পুঁজি করে শুরু করেছে বাণিজ্য।

ডিসি/এসআইকে/এসপি