ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ১০ লাখ ৬৮ হাজার শিশুশ্রমিক : বিবিএস

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দেশের ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২০২ জন শিশুশ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। ১০ বছর আগে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা কমলেও শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। ১০ বছর আগের জরিপে যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯।
‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২’ নামের প্রাথমিক এ জরিপ প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান ই এলাহি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিয়াইনেন, ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার মাট ক্যানেল। বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের তথ্য জানতেই জরিপটি পরিচালনা করা হয়। সারাদেশের ৩০ হাজার ৮১৪ খানা থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ৫ থেকে শুরু করে ১৭ বছর বয়সী শিশুকে জরিপে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার। এর মধ্যে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিল ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭। ২০১৩ সালের জরিপে অনুযায়ী দেশে শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৪। ওই সময় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ শিশু ছিল শ্রমজীবী। শ্রমে নিয়োজিত ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশু। জরিপের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট শিশুর ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছেলে এবং বাকি ৪৮ দশমিক ২১ শতাংশ মেয়ে শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুশ্রম বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগের বিষয়। শিশুশ্রমের সঙ্গে দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগ বিনষ্ট হওয়া ও বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি জড়িত। দেশেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে শ্রম আইনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের রক্ষার বিধান যুক্ত হয়। ২০১১ সালের জাতীয় শিশুনীতি এবং ২০১০ সালের জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন আইন করা হয়। এছাড়া আইএলওর সংশ্লিষ্ট কনভেনশন ১৩৮ এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার-সংক্রান্ত কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে সরকার। এসব কনভেনশনে শিশুকে সব ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখার কথা বলা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে শ্রম মন্ত্রণালয়।
আলোচনায় পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের কারণেই শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হয়। ধনী পরিবারের ছেলেরা শ্রমিক হতে আসে না। তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে কাজ করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও ভালো অবস্থানে যেতে পারলে শিশুশ্রম এবং বৈষম্য এমনিতেই কমে আসবে ।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, চার দেয়ালের ভেতরে যে শিশুশ্রম হয় তাদের বের করে আনতে হবে। বাসাবাড়িতে অনেক বাচ্চা শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান এ ইলাহি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩ বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ